ধানের বাম্পার ফলন: কৃষকের মুখে হাসি
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:০৬
নীলফামারীতে রোপা আমন ধানের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার কৃষকরা আগের সব লোকসান কাটিয়ে লাভের আশা করছেন। তাইতো হাসির ঝিলিক কৃষকের মুখে।
সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া (সরকার পাড়া) গ্রামের কৃষক মো. বাবুল হোসেন ১৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। বেশ ভালো হয়েছে ফসলও। তাইতো হাসি মুখেই তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ধান আবাদ করে চরম লোকসান হচ্ছিল। এবার বাজারও ভালো, আবহাওয়াও অনুকূলে রয়েছে। সবকিছু মিলে লোকসান হবে না। এ মৌসুমে ঘরে আসবে অতিরিক্ত মুনাফা।’
তিনি বলেন, ধান কাটতে আরও প্রায় তিনদিন সময় লাগবে। এরপর শুরু হবে ধান মাড়াইয়ের কাজ। জেলায় বাবুলের মতো অনেক কৃষক এবার চলতি মৌসুমে লাভের আশা করছেন।
উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের দোনদরি গ্রামের চৌধুরী পাড়ায় মুসা চৌধুরী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বীজ তলা থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। এবার আশা করছি ধানের ফলন পাওয়া যাবে বিঘা প্রতি প্রায় ১২ মণ পর্যন্ত। এতে বর্তমান বাজার মূল্যে মণ প্রতি বিক্রি হবে এক হাজার ৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা। হিসাব অনুযায়ী বিঘা প্রতি প্রায় লাভ হবে ১২ হাজার সাতশ টাকা।
তিনি আরও বলেন, নতুন ধানের গন্ধে ভরে উঠবে মন। ধান বিক্রি করে ছেলে মেয়ের নতুন জামা, জুতা, বই, খাতা, কলমসহ নবান্যের উৎসবে মেতে উঠবে গ্রামের কৃষক।
জেলা সদরের টুপামারী, রামনগর, কচুকাটা, কুন্দুপুকুর, পলাশবাড়ী. লক্ষিচাপ, পঞ্চপুকুর ও চড়াইখোলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে ধান কাটার এমন চিত্র। শ্রমিকরা ধানের বোঝা নিয়ে দলে-দলে ফিরছেন জমির মালিকের বাড়ির বাড়িতে।
তবে টুপামারী ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামের ধান কৃষক খোকন বলেন, শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতেও লোক মিলছে না গ্রামে। বাধ্য হয়ে ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী পরিবার-পরিজন নিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছেন অনেকে।
জেলা সদরসহ ছয় উপজেলায় ছোটখাটো গার্মেন্টস কারখানা, শিল্প কলকারখানা ও নানা কাজ করছেন শ্রমিকরা। ফলে শ্রমিকের সংকট বেড়েছে।
১২ জনের শ্রমিক দল করে ধান কাটছেন নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের ভাঙ্গা মাল্লি এলকায়। ওই দলের দলনেতা আতিকুল ইসলাম শ্রমিক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে ধান কাটছি আমরা। গ্রামের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কেউ শহরে রিকশা চালাচ্ছেন। আবার কেউ জেলার বাইরে বিভিন্ন কাজ করছেন। তাই কমেছে শ্রমিকের সংখ্যা।’
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণে অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে জেলায়। কৃষকরা এবার লাভেরও মুখ দেখবেন এমনটাই আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তরা।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (ডিডি) গোলাম ইদ্রিস জানান, জেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবহাওয়া ভালো থাকায় ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়।
তিনি বলেন, গত দুই-তিন বছরের তুলনায় এবারে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে জেলায় শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকের ঘরে ধান তুলতে বেশ বেগ পেতে হবে।
এই সংকট উত্তরণের জন্য জেলা ও উপজেলার মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে ধান কাটার জন্য রিপার মেশিন এবং ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য কম্ববাইন্ড হারবেস্টার মেশিন দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এতে সময় কম লাগবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা।