বগুড়ায় পানিফল চাষে সুদিন ফিরেছে চাষিদের

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:০৫

সাহস ডেস্ক

পতিত খাল-বিল ও জলাশয় জুড়ে চাষ হচ্ছে পানি ফলের গাছ। বাজারে প্রচুর পানিফল উঠেছে। চাষ যেমন বাড়ছে তেমনি বেচাকেনা হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে দাম একটু বেশি হলেও এখন কিছুটা কমে এসেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত পানি ফল পাওয়া যাবে বাজারে। বগুড়া জেলায় গাবতলী উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার জলাভূমিতে পানি ফল চাষ হয়েছে। 

প্রতি হেক্টরে ২৫ টন ফল উৎপাদন হয় বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপরিচালক প্রতুলণ চন্দ্র সরকার। কম খরচে লাভজনক এ ফল চাষ করে অনেক চাষির সুদিন ফিরেছে। বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় মৌসুমী পানিফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। আশ্বিন মাস থেকে শুর করে শীতকাল জুড়েই ক্ষেত থেকে পানিফল তুলতে চাষিরা ব্যস্ত থাকে। গাবতলী ছাড়াও অন্যান্য উপজেলায় পানিফলের চাষ হয়ে থাকে তবে তার পরিমান খূব বেশি নয়।

গাবতলী উপজেলার পতিত জলাশয়ে দৃষ্টিনন্দন পানিফল গাছে ভরে গেছে। চাষিরা পতিত খাল-বিল জলাশয়ে পানিফলের সঙ্গে মাছ চাষ করছেন। এ ফলের কোনো বীজ নেই। লতাপাতার মতো সারা বছরই জলাশয়ে ভাসতে দেখা যায় পানিফলের গাছ। নিচু এলাকার বিল-জলাশয়ে মৌসুমী ফসল হিসেবে পানি ফল চাষ হয়। মাছের সঙ্গে মিশ্রভাবেও চাষিরা এ ফল চাষ করেন। 

গাবতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মুহাম্মদ আহসান শহীদ বলেন, মৌসুমে প্রতি জমি হতে ২-৩ বার পানি ফল আহরণ করা যায়। এটি পানিতে ভরপুর এবং প্রচুর খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। শহর গ্রামে সব খানেই এ ফলের চাহিদা রয়েছে। সেদ্ধ করেও এফল খাওয়া যায়। বাজারে কাঁচা ফলের পাশাপাশি সেদ্ধ ফলও বিক্রি হয়ে থাকে। লাভজনক হওয়ায় পানিফল চাষ এ উপজেলায় দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে। 

গাবতলী উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, দিনভর বিল-জলাশয় থেকে পানিফল তুলছেন চাষিরা। কাঁক ডাকা ভোরে ভ্যানগাড়ি-ভটভটিতে বস্তায় ভরে এ পানিফল বিক্রির জন্য নিচ্ছেন বগুড়া শহরের চেলোপাড়া চাষিবাজারে। একমাসেরও বেশি সময় ধরে ভোরবেলা চাষি আর ব্যাপারীদের আনাগোনায় সরগরম এ বাজার। ভোরের লাল সূর্যের আভা মিলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেনাবেচা শেষ এখানে। প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে সকাল সাতটার মধ্যেই গড়ে ১০০ মণ পানিফলের আমদানি হয় চাষিবাজারে। সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যেই শেষ হয় কেনাবেচা। 

গাবতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বহু বছর ধরেই এ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পানিফল চাষ হচ্ছে। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই পানিফল চাষ বাড়ছে। গতবছর শীত মৌসুমে উপজেলায় পানিফল চাষ হয়েছিল ৭০০ হেক্টর জমিতে। গতবছর এ ফল চাষে চাষিরা ব্যাপক লাভবান হওয়ায় উপজেলার ৭৫০ হেক্টর বিল-জলাশয়ে এ ফলের চাষ হয়েছে। 

গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের গাড়ামারা বিলের ২৫ বিঘা জলাশয় পত্তনী নিয়ে পানিফল চাষ করেছেন তেরপাখি গ্রামের মুকুল হোসেন (৪০)। তিনি জানান, ২৫ বিঘা বিল একবছরের পত্তনীর জন্য মালিকদের দিতে হয়েছে একলাখ ২০ হাজার টাকা। পানিফল চাষে খরচ হয়েছে ৫০হাজার টাকা। একমাস ধরে ক্ষেত থেকে পানিফল তুলছি। ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে তুলে ১০০ মণ পানিফল তুলে বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি। 

পানিফল চাষি মুকুল বলেন, একসময় দিনমজুরি দিতাম। পরে পানিফল কেনাবেচা ব্যবসা শুরু করি। এখন পানিফল চাষ করে সংসারে সুদিন ফিরেছে। 

উপজেলার গোড়দহ বিলে থেকে পানিফল তুলছিলেন চাষি ফটু মিয়া। তিনি বলেন, এক সময় সহায় সম্বল কিছুই ছিলো না। পানিফল চাষে এখন সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। অন্যবছরের তুলনায় এবার ফলন ও দাম দুটোয় ভালো পাচ্ছি। শীতকালে ফল আহরণ শেষ হলে বিলের পানিতে ফলের চারা থেকে যায়। ধীরে ধীরে সেই চারায় লতাপাতা ছড়িয়ে পড়ে। বেড়ে যায় গাছের সংখ্যা। পানির নিচের দিকে যেতে থাকে শিকড়। বর্ষাকালে গাছে-গাছে লতাপাতায় ভরে যায়। গাছে রোগবালাই হলে কিছু কীটনাশকও ছিটাতে হয়। ভাদ্র মাস থেকে গাছে ফল আসা শুরু হয়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফল বিক্রি শুরু হয়। 

প্রায় প্রতিদিন ক্ষেত থেকে ফল তোলা যায়। গাবতলীর গোড়দহ বিলের ৩৫ বিঘার জলাশয়ে এবার পানিফল চাষ করেছেন চাষি শহিদুল ইসলাম (৫২)। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই পানিফল চাষ করছি। গত দুই মৌসুমে খরচ বাদে ৫ লাখ টাকা লাভ করেছি। ব্যাপারীরা দরদাম করে এসব পানিফল কিনছেন। 

রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে পানিফল কিনতে বগুড়ার চাষিবাজারে এসেছিলেন মৌসুমী ব্যবসায়ী মফিদুল ইসলাম। ২০ মণ পানিফল কিনে ভ্যানে করে রেলস্টেশনে যাচ্ছিলেন তিনি ট্রেন ধরার জন্য। তিনি বলেন, সদ্য তোলা পানিফল প্রতিমণ ৫২০ টাকা দরে কিনেছেন। 

চাষিবাজারের পানিফলের ব্যাপারী বশির উদ্দিন বলেন, একমাস আগে মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ পাকা পানিফল ১৮০০ এবং লালরঙের পানিফল পানিফল প্রতিমণ ১০০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। পানিফল চাষ হওয়ায় বাজারে এ ফলের আমদানি অন্যবছরের তুলনায় বেশি। তবে মঙ্গলবার সকালে বাজারে ৫শ থেকে ৫২০ টাকা মন দরে পানি ফল বিক্রি হয়েছে। 

ফেরি করে বিক্রেতা রবিউল জানালেন, আজ মঙ্গলবার ৬০ কেজি কিনেছি ১৩ টাকা কেজি দরে। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই তার বিক্রি শেষ হবে। গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১০০ মণ পানিফলের আমদানি হলেও চলতি সপ্তাহের মধ্যে ক্ষেত থেকে প্রচুর পানিফল উঠছে। আর এক সপ্তাহ এ ফল পাওয়া যাবে বাজারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত