সাতক্ষীরায় কলাচাষে ভাগ্য বদল চাষীদের

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০১৮, ১৫:৫৭

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাচাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। এতে জেলায় কলাচাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা 
দিয়েছে। জেলার কলাচাষীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেকার যুবকদের কাছে কলা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে 
উঠেছে। ফলে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও এসেছে তাদের। কৃষকরা এখন পুরাতন ধ্যান-ধারণা পাল্টে লাভজনক ফসল 
হিসেবে কলা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় সহস্রাধিক কলা বাগান।

‘কলা রুইয়ে না কাটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’ প্রবাদ বাক্যটি যেন সাতক্ষীরার কলা চাষীদের মাঝে 
বাস্তবে রূপ নিয়েছে। একদিন যাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো আজ তারা স্বাবলম্বী। অনেকটা সোনার 
সংসার। অভাবের সংসার কাটিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছে। এমন তথ্য জানালেন 
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের কয়েকজন কলাচাষী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলাতে ৭২১ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ 
হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১৫০ হেক্টর জমিতে, কলারোয়ায় ৭৫ হেক্টর, তালায় ৭৮ হেক্টর, দেবহাটায় ৮ 
হেক্টর, কালিগঞ্জে ৩৮০ হেক্টর, আশাশুনিতে ২৫ হেক্টর এবং শ্যামনগরে ৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে।

এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫৯২ মেট্রিকটন। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২৭শ’ মেট্রিকটন, 
কলারোয়ায় ১৬৫০ মেট্রিকটন, তালায় ১৭৬৭ মেট্রিকটন, দেবহাটায় ৮০ মেট্রিকটন, কালিগঞ্জে ২৬৯৫ মেট্রিকটন, 
আশাশুনিতে ৬২৫ মেট্রিকটন এবং শ্যামনগরে ৭৫ মেট্রিকটন। এছাড়া বসতবাড়িসহ ব্যক্তি পর্যায়ে জেলায় ব্যাপকভাবে কলা চাষ হয়েছে।

সদরের ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের কলা চাষী আনারুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরায় হাইব্রিড জাতের সাগর কলা চাষ করে 
তারা লাভবান হচ্ছেন। অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কলা চাষ 
হচ্ছে। দিন দিন এর পরিধিও বাড়ছে। অন্যদিকে বাজারে কলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে 
বলে জানান তারা।
  
কৃষি কর্মকর্তা দিপক কুমার রায় জানান, ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামের অধিকাংশ কৃষক কলা চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে এসব কৃষক ৩০-৩২ টন পর্যন্ত কলা উৎপাদন করছেন। সাতক্ষীরায় অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় অর্থকরী ফসল হিসেবে কলা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

জেলাতে অমৃত সাগর, সবরি অনুপম, চাম্পা, কবরি, নেপালি, মোহনভোগ মানিকসহ বিভিন্ন জাতের কলা চাষ হয়ে 
থাকে। তবে সবরি, মানিক মেহের সাগর ও নেপালি কলার চাহিদা অনেক বেশি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ধান, 
পাট ও আখসহ প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শ্রম ব্যয় খুবই কম। বিক্রির ক্ষেত্রেও ঝামেলা নেই। 
কলার বাজার দরেও সহজে ধস নামে না। তাই ঝুকি কম থাকায় চাষীরা কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুল মান্নান জানান, সব উপজেলায়ই কমবেশি কলা চাষ করা 
হয়। তবে সদর উপজেলার ঘুটেরডাঙ্গী গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে সাগর কলা চাষ হচ্ছে। জেলার মাটি ও আবহাওয়া সব ধরণের ফসলের উপযোগী। এখানে বারো মাসই বিভিন্ন ধরণের ফসল ফলে। তারমধ্যে অর্থকরী ফসল হিসেবে এখন কলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষি খামার বাড়ির পক্ষ থেকে কলাচাষীদের সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত