পৃথিবীর বাইরের যে প্রাণিরা

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০১৬, ২০:১৯

সাহস ডেস্ক

এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণি নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। কারো মতে এ কেবল মাত্র বিভ্রম আবার কেউ বা ভাবেন এলিয়েনদের অস্তিত্ব আমাদের মতোই যা অস্বীকার করা যাবে না।

ভিনগ্রহের প্রাণি বা ‘এলিয়েন’ বলতে পৃথিবী-ভিন্ন মহাকাশের অন্য কোনো স্থানের প্রাণকে বোঝায়। অনেকেই ভিনগ্রহের প্রাণি বলতে মানুষের মতোই কিন্তু আকৃতির একটু ভিন্ন এমন প্রাণি বুঝে থাকে। কিন্তু যে কোনো ধরনের প্রাণির আকৃতিরই হতে পারে এলিয়েন। এমনকি ভিনগ্রহের সামান্য একটি ব্যাকটেরিয়াও এলিয়েন হতে পারে।

ইংরেজি  Aliens শব্দটি অনাকাঙ্খিত বা অনাহুত কিংবা অপরিচিত আগন্তুককে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ভিনগ্রহের প্রাণিদের সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষের অজ্ঞতাই মূলত এই অপরিচিত প্রাণিদের জন্য Aliens নামটি বরাদ্দ করেছে। বাংলায় পৃথিবী-ভিন্ন অন্যগ্রহের প্রাণকে একত্রে ভিনগ্রহের প্রাণি বলা হয়। তবে গ্রহ ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রাণও এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত।

অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে এলিয়েনদের ভাষা কি? তারা তাদের মনের ভাব কিভাবে প্রকাশ করে? আসলে এলিয়েন কাল্পনিকরা এদের ভাষাকে ‘জিনোলিংগোইস্টিকস’ অথবা ‘এক্সওলিংগোইস্টিকস’ নামকরণ করেছেন এবং বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে এটি এর রাস্তা খুঁজে পায়।

১৯৮৬ সালে ‘জিনোলিংগোইস্টিকস’ নামটি প্রথম ব্যবহার করেছিল শিলা ফিঞ্চ তার একটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ট্রায়াড উপন্যাসে।

প্রজন্মের বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর লেখকরা এলিয়েন ভাষা নিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তাদের কিছু তাদের কল্পকাহিনীর চরিত্রের জন্য কৃত্রিম ভাষা তৈরি করেছে, আবার অন্যরা এই সমস্যাটি সমাধান করেছে এক ধরনের বিশেষ সার্বজনীন অনুবাদকের সাহায্যে অথবা অন্যান্য কল্পনাপ্রসূত প্রযুক্তির মাধ্যমে।

জীবনযাত্রায় অন্যতম একটি উপাদান পোশাক। বিজ্ঞানের কাছে ভিনগ্রহের প্রাণিদের পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। যারা ভিনগ্রহের প্রাণি দেখেছেন বলে দাবি করেন, তাদের বক্তব্য হলো ভিনগ্রহের এসব বুদ্ধিমান প্রাণিরা পোশাক হিসেবে কিছুই পরে না। এ বিষয়ে মানুষের তত্ত্বটি হলো যেহেতু তারা অতিবুদ্ধিমান, তাই পোশাক-পরিচ্ছদের বাহুল্য ত্যাগ করতে শিখে নিয়েছে। তবে তারা মাথায় হুড পরিধান করে থাকে বলে অনেকের দাবি। কারো দাবি, তারা লম্বা লম্বা জোব্বা পরে থাকে।

ভিনগ্রহের প্রাণিরা নাকি স্কুলেও পড়ে, তবে শুধুমাত্র আকৃতিতে লম্বারা স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের কোনো এক বনের ভেতরে একদল ভিনগ্রহের প্রাণিকে তাদের শিক্ষক পড়াচ্ছিলেন এই দৃশ্য দেখে বিখ্যাত লেখক হোয়াইটি স্ট্রেইকার তার ‘সিক্রেট স্কুল: প্রিপারেশন ফর কন্ট্রাক্ট’ বইতে এদের কথা লিখেছিলেন। অবশ্য এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও হয়েছিল।

তবে সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের খবরে প্রকাশিত হয় ভিনগ্রহের প্রাণি অর্থাৎ এলিয়েনদের নিয়ে একটি খবর বর্তমান সময়ের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব গবেষক স্টিফেন হকিং সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, মহাবিশ্বে আন্তঃমহাজাগতিক প্রাণি বা এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকতে পারে বটে। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা পৃথিবীর জন্য উল্টো ফল দিতে পারে।

এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকার প্রায় ষোলো আনা সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন এই যুগের সবার সেরা জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। তবে তিনি এও বলেছেন, মানুষের উচিত হবে তাদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা।

হকিং মানুষদের এলিয়েন বিষয়ে সাবধান থাকার কথা বলেছেন।

স্বনামধন্য এই বিজ্ঞানী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, তারা যদি বুদ্ধি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষের চেয়ে উন্নত হয়, তা হলে আমাদের অবস্থা কঠিন হয়ে উঠবে। এলিয়েনরা পৃথিবী নামের গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের খোঁজ পেলে নির্ঘাত পৃথিবীতে চলে আসবে। তারপর যদি বুঝতে পারে, পৃথিবী প্রযুক্তিগতভাবে তাদের চেয়ে অনুন্নত, তখন তাদের দস্যুপনার শিকার হবে মানুষ। আর তাতে মানুষের জন্য নেমে আসবে অনিবার্য বিপর্যয়। বিপর্যয়ের ধরনটা তিনি উদাহরণ সহযোগেই দেখিয়ে দিয়েছেন। 

তাঁর মতে, কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের পর তা যেমন আদিবাসী আমেরিকানদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি। সম্প্রতি নাসার পাঠানো বিভিন্ন মহাকাশযান থেকে শুরু করে অতীতে পাঠানো অনেক মহাকাশযানেই পৃথিবী বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য পাঠানো হয়েছে এলিয়েনদের উদ্দেশে। পাশাপাশি রেডিও ওয়েভ বার্তার মাধ্যমেও মহাকাশে এলিয়েনদের খোঁজ চলছে।

হকিং জানিয়েছেন, ‘আমার গাণিতিক যুক্তি এলিয়েন থাকার সম্ভাবনার কথাই বলে। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলাই মানুষের জন্য ভালো হবে। কারণ বুদ্ধিমান প্রাণি হিসেবে তারা যে গ্রহেই যাবে তাতেই দখল ও প্রভুত্ব কায়েম করতে পারে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, দেখতে কেমন হবে সেটা বের করাই প্রকৃত চ্যালেঞ্জ, কারণ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর ছবিতে প্রচলিত চেহারার বাইরে তারা যে কোনো আকারেরই হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত