ইতিহাসেও রয়েছে ভূতের সঙ্গে যৌনতার কথা!

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:০৭

সাহস ডেস্ক

‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এ রবীন্দ্রনাথ প্রেতাত্মার সঙ্গে মানুষের এক প্রেম-সম্পর্কের কথাই লিখেছিলেন। কিন্তু, সেই প্রেম ঘনিয়ে ওঠার আগেই গল্প ফুরিয়ে গেল। সেই থেকেই কি না কে জানে, বাঙালির সাহিত্যে ভৌতিক প্রেম ব্যাপারটা ঘুরে ফিরে এসেছে। অশরীরীর সঙ্গে প্লেটনিক প্রেম চলতেই পারে, কিন্তু শরীরী প্রেম বা সাদা বাংলায় যৌনতা? শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সাহস করেই তাঁর বরদা সিরিজে এক নীলকর ভূতের কথা লিখেছিলেন, যে সুযোগ পেলেই রক্তমাংসের নারীদের বলাৎকার করত। শরদিন্দুরই কামিনী ডাইনির গল্পে ইরোটিক উদ্ভাস বেশ স্পষ্টই ছিল। কিন্তু শরদিন্দুর পরে আর তেমন ‘সেক্সি’ ভূতে্র দেখা মেলেনি। বাঙালির ভূতচর্চা পরে একেবারেই শিশু সাহিত্য-কেন্দ্রিক হয়ে পড়ায়, সেখান থেকে সরাসর বাদ যায় যৌনতা। বাঙালি ভূতের আর সাবালক হওয়া হয়নি।

কিন্তু এসব হ্যাঙ্কি-প্যাঙ্কি থেকে একেবারেই মুক্ত পশ্চিমী ভূতকুল। ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’ থেকে শুরু করে হাল আমলের স্টিফেন কিং— হরর আর ইরোটিকা হাতে হাত দিয়ে হেঁটেছে। সেখানে প্রায়শই দেখা পাওয়া যায়, অতৃপ্ত শরীরী বাসনা নিয়ে ভূত রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বায়বীয় অস্তিত্বের ভূতকুল নিয়মিত সহবাস করছে শরীরী মানুষের সঙ্গে। এই ‘অবাস্তব’ নিয়ে কেন সরব হয় না পশ্চিমী জগৎ?

সমাজ-ইতিহাসের গবেষকরা জানাচ্ছেন, পশ্চিমে দীর্ঘকাল ধরেই প্রেত বা পরাবাস্তব জগতের বাসিন্দাদের সঙ্গে মানুষের সব রকম লেন-দেনের কথা চলিত রয়েছে, যার মধ্যে যৌনতা একটা কমন ব্যাপার। হলিউড সিনেমায় প্রায়শই দেখা যায় এমনটা। ঠিক কী কাজ করছে এই বিশ্বাসের পিছনে?

দেখা যেতে পারে সমাজ-ইতিহাসের পণ্ডিতদের মতামত।

•  অনেক গবেষকই মনে করেন, মানুষের সঙ্গে ছায়ালোকের বাসিন্দাদের শরীরী সম্পর্কের ধারণা অতি প্রাচীন। এমন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন ইহুদি-খ্রিস্টান ঐতিহ্যে। বাইবেলের জেনেসিস পর্বে সাপ-রূপী শয়তানের সঙ্গে ইভের ‘মিলন’ এবং তা থেকে কেইন-এর জন্মকে তাঁরা এর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন। এর পরেও বাইবেল এমন অসংখ্য সম্পর্কের কথা জানায়, যেখানে এক পক্ষ মানুষ হলেও অন্য পক্ষ কিছুতেই মানুষ নয়।

• চতুর্দশ শতক নাগাদ ইউরোপে রীতিমতো উৎসাহের সঙ্গে চর্চিত হতে শুরু করে ডাইনিবিদ্যা। এই বিদ্যার চর্চাকারীরা মূলত ছিল ‘শয়তান’-এর উপাসক। এদের একাংশের বিশ্বাস ছিল, এই পার্থিব জগতেই শয়তানের সঙ্গে মিলিত হওয়া যায়। এবং সেই মিলন রীতিমতো শরীরী। প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক রোমান পোলানস্কি তাঁর ‘রোজমেরি’জ বেবি’ ছবিতে বিংশ শতকের এক শয়তান উপাসক সম্প্রদায়কে দেখিয়েছেন। যাদের প্রভাবে ছবির নায়িকা ‘শয়তান’-এর দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। শয়তান উপাসনার অন্যতম উপাচারই ছিল অবাধ যৌন সংসর্গ।

•  মধ্যযুগ থেকে ১৮ শতক পর্যন্ত ডাইনি বা শয়তান উপাসকদের রমরমা চালু ছিল। এর মধ্যেই ঘটেছে এই সব সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক চার্চের অভিযান। মারা পড়তে হয়েছে বিস্তর নিরপরাধ মানুষকেও। তার মধ্যেই যারা চর্চা চালানোর, তারা চালিয়ে যায়। ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ‘যুক্তির যুগ’ শুরু হলে এই সব প্যারানর্মাল কাণ্ড-কারখানা খানিকটা ধামাচাপা পড়ে। কিন্তু ১৮৯৭ নাগাদ ব্রাম স্টোকারের যুগান্তকারী উপন্যাস ‘ড্রাকুলা’  প্রকাশিত হলে দেখা যায়, ‘আনডেড’ ভ্যাম্পায়াররা রীতিমতো সিডিউস করছে রক্তমাংসের জোনাথন হার্কারকে। আবার সাম্প্রতিক ‘টোয়ালাইট’ সিরিজে ভ্যাম্পায়ার এবং রক্তমাংসের মানুষের যৌনমিলনে শিশুর জন্মও ঘটে। 
 
• বিংশ শতকে হলিউড সংস্কৃতিতে বার বার উঠে এসেছে অতৃপ্ত আত্মার যৌন অভিসারের কথা। রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষও প্রেতের প্যাশনকে তুলে আনেন তাঁর ‘মণিহারা’ বা ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এ। ততটা এক্সপ্লিসিট তিনি হননি বটে, হওয়ার দরকারও ছিল না। শরদিন্দুর কথাও সকলেই জানেন। পশ্চিমে হরর-অতিলৌকিক সাহিত্যে যৌনতা ঝেঁপে আসে। হলিউডেও প্রাবল্য দেখা দেয় ভৌতিক যৌনতার।

• হিন্দি ছবিতে প্রেমিক ভূত প্রায়শই হানা দিয়েছে। রামসে ব্রাদার্স-এর হরর ছবিতে স্নানরতা নায়িকার গায়ে ভূতে রক্তের শাওয়ার খুলে দিয়েছে। কিন্তু ভূত বিছানায় গড়াগড়ি দেয়নি। সে সাধও মিটল ২০০৩-এর ‘হাওয়া’ ছবিতে। ঘুমন্ত তাবু-র ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে লম্পট ভূত। খেলা গম্ভীর।

• ইন্টারনেট জুড়ে প্যারানর্মাল ব্লগাররা লিখেই চলেছেন তাঁদের অতিলৌকিক এনকাউন্টারের অভিজ্ঞতা। তার অন্তত ৩০ শতাংশে যৌন যৌন গন্ধ। এসবের সত্যাসত্য নিরূপণ করবে কে?

সূত্র : এবেলা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত