মাটির তৈরি একতলা ও দোতলা বাড়ি

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:২৯

সাহস ডেস্ক

বিজ্ঞান অগ্রসর হচ্ছে দ্রুত। ডিজিটালের আলোকবর্তিকা গ্রাম জনপদকেও প্রায় ছোঁয় ছোঁয়। পরিবর্তনশীল এই সময়ের বাস্তবতাকে স্বীকার করেও এ কথা দ্বিধাহীন বলা যায়, আমাদের ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা শান্তির নীড় ‘মাটির বাড়ি’ ঘরের আবেদন এখনও এতটুকু ফুরিয়ে যায়নি। মাটির ঘর গ্রামের মানুষের কাছে এখনো শান্তির নীড়।

কিন্তু কালের পরিক্রমায় গফরগাঁওয়ের অন্যান্য ইউনিয়নের ন্যায় আজ সারাদেশে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি বাড়ি-ঘর হারিয়ে যেতে বসলেও গফরগাঁওয়ের টাঙ্গাব ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এখনও চোখে পড়ে গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী সারি সারি হাজার হাজার মাটির ঘর। এ ইউনিয়নটির কোনো কোনো বাড়িতে মাটির ঘরের পাশাপাশি ইটের তৈরি দালান দেখা মিললেও মাটির ঘরের তুলনায় খুবই নগণ্য। এখানকার সব গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর গরিবের ‘এসি’ বাড়ি হিসেবে খ্যাত। তবে উপজেলার একটি পৌরসভাসহ বাকি ১৪টি ইউনিয়নে মাটির তৈরি বাড়ি তেমন একটা চোখে পড়ে না।

মাটির বাড়ি শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে টাঙ্গাব ইউনিয়নের গরিব দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও এই মাটির দ্বিতল বাড়ি তৈরি করছেন। এখানকার বাসিন্দারা মাটির ঘরে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

জানা যায়, অতি প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশের গ্রামগঞ্জে মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির বাড়ি ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা মজবুত বাড়ি তৈরি করতেন। যা এখনও কিছু কিছু এলাকায় চোখে পড়ে। তেমনি গফরগাঁওয়ের টাঙ্গাব ইউনিয়নের সব গফরগাঁওয়ের টাঙ্গাব ইউনিয়ন, মাটির তৈরি একতলা ও দোতলা বাড়িগ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে একতলা ও দোতলা মাটির ঘর রয়েছে। ইউনিয়নটির সব বাড়িতেই সারিবদ্ধ মাটির ঘর দেখা গেছে। কোনো কোনো বাড়ির এসব মাটির ঘরে বিভিন্ন রকমের আলপনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে ৩-৪ ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। একতলা মাটির বাড়ির জন্য ১২ থেকে ১৪ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ-বাঁশ অথবা লোহার এঙ্গেল দিয়ে সিলিং তৈরি করে তার ওপর টিনের ছাউনি দেওয়া হয়। আর দোতলা বাড়ির জন্য ১৩ থেকে অন্তত ২৫ ফুট উঁচু দেয়াল তৈরি করে ১৩ ফুটের মাঝে তালের গাছের ফালি দিয়ে পাটাতন তৈরি করে দুই থেকে তিন ইঞ্জি মোটা কাঠের ছাউনি দেওয়া হয়। আর ২৫ ফুটের মাথায় একতলা বাড়ির ন্যায় টিনের ছাউনি দেওয়া হয়। মাটির বাড়ির মালিকদের দাবি, ভূমিকম্পেও মাটির ঘরের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। একেকটি মাটির ঘর এক থেকে দেড়শ’ বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর কালের পরিক্রমায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব মাটির বাড়ি ইট-বালির দালান-কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে।

টাঙ্গাব ইউনিয়নের পাঁচাহার গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম খান, কালাম খান, জালাল উদ্দিন খান, বজলুর রহমানসহ আরও অনেকে জানান, তারা প্রত্যেকেই পৈতৃক সূত্রে মাটির তৈরি বাড়ি পাওয়ার পরেও নতুন করে একটি একতলা ও একটি দোতলা মাটির ঘর তৈরি করেছেন। তাদের পূর্বপুরুষরা মাটির তৈরি বাড়িতে জীবন কাটিয়ে গেছেন। মাটির তৈরি বাড়ি বসবাসের জন্য বেশ আরামদায়ক।

তারা জানান, এ ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতেই দোতলা ঘরের পাশাপাশি প্রত্যেকেরই একটি করে একতলা মাটির ঘর রয়েছে। কেউ কেউ দোতলায় বসবাস করেন আবার কেউবা দোতলায় ধান সংরক্ষণ করেন। এ ছাড়া আরেকটি কারণে এ এলাকায় মাটির দোতলা ঘর তৈরি করা হতো। এর কারণ হলো এ ইউনিয়নে এক সময় খুব বেশি ডাকাতি হতো বলে বিত্তশালীরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মাটির তৈরি দোতলা ঘর তৈরি করে দ্বিতীয় তলায় তারা বসবাস করতেন।

টাঙ্গাব ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন সাগর জানান, ইউনিয়নটির ১৩টি গ্রামের সব বাড়িতেই মাটির তৈরি একতলা ও দোতলা ঘর রয়েছে। সম্প্রতি যেসব বাড়িতে ইটের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেসব বাড়িতে একাধিক মাটির ঘর রয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে এ ইউনিয়নকে মাটির বাড়ির ইউনিয়ন বলা যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত