কিউবায় মানুষ জবাই হলো উৎসবের রীতি

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:২১

সাহস ডেস্ক

প্রথম দর্শনে মনে হবে কোনো মৃত মানুষের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান চলছে। চারজনের কাঁধে বাহিত হয়ে একটি কফিন এগিয়ে চলেছে। কফিনের ঢাকনা বন্ধ, শুধু এক দিকের উন্মুক্ত একটি অংশ দিয়ে কফিনের ভেতরে শায়িত মানুষটির মাথাদেখা যাচ্ছে। চোখ বোজা অবস্থায় নিথর হয়ে রয়েছে সেই মাথা। কফিনের পেছন পেছন চলেছেন কিছু মানুষ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কিছু পাকা মাথার বৃদ্ধাও যারা কাঁদছেন। বোঝাই যাচ্ছে, মৃত মানুষটির শোকেই তারা আকুল। কিন্তু আর পাঁচটি অন্তিমযাত্রার সঙ্গে এই শোভাযাত্রার কিছু ভয়াবহ পার্থক্যও রয়েছে।

প্রথমত, একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, কফিনের পেছনে ক্রন্দনরত বৃদ্ধাদের সহযাত্রী হিসেবে রয়েছেন আরও কিছু মানুষ, যাদের চোখে-মুখে শোকের লেশমাত্রও নেই। হর্ষধ্বনি আর হাততালির মাধ্যমে তারা উজ্জীবিত করে চলেছেন একে অন্যকে।

এনিয়ে ভয়াবহ একটি  তথ্য  হলো এই যে, কফিনের ভেতরে যিনি শুয়ে রয়েছেন, তিনি আদৌ মৃত নন, বরং জলজ্যান্ত একটি মানুষ।

কিউবার রাজধানী হাভানা থেকে ১২ মাইল দূরবর্তী সান্তিয়াগো দে লাস ভেগাস গ্রামে অনুষ্ঠিত ‘বারিয়াল অব প্যাচেন্দে’ নামের এক বিচিত্র উৎসবের অংশ হিসেবেই কবর দেওয়া হয় এক জন জীবন্ত উৎসবের রীতিই হলো মানুষ জবাইমানুষকে। ১৯৮৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে পালিত হয়ে আসছে এই উৎসব। বছরের গোড়ার দিকেই গ্রামের এক জনকে নির্বাচন করা হয় ‘প্যাচেন্দো’ হিসেবে, অর্থাৎ উৎসবের দিনে যাকে কবর দেওয়া হবে। তারপর নির্দিষ্ট দিনে কফিনের মধ্যে তাকে শোওয়ানো হয়। শুরু হয় শোকযাত্রা। চলে হাততালি, গান, উল্লাস। কিন্তু একটি অন্তিমযাত্রায় অংশ নেওয়া সকলেই তো আর আনন্দে উৎরোল হতে পারেন না! তাই শোভাযাত্রায় রেখে দেওয়া হয় কিছু মহিলাকেও, যাদের দায়িত্ব ওই প্যাচেন্দোর বিধবা স্ত্রী হিসেবে শোকবিহ্বলতার অভিনয় করা। শোকযাত্রাসহ কফিন পৌঁছায় উৎসবের জন্যই আলাদাভাবে তৈরি করা কবরস্থানে। খোঁড়া হয় ছ’ফুট গভীর একটি কবর। উপস্থিত থাকেন ধর্মযাজকও। যথাবিহীত রীতি মেনে মানুষ সমেত কফিনটিকে শোওয়ানো হয় মাটির গভীরে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ভূগর্ভে শায়িত কফিনকে ঘিরে কিছুক্ষণ হইহুল্লোড়ের পরেই আবার জীবন্ত মানুষটি সমেত কফিনটিকে তুলে আনা হয় উপরে।

কিন্তু এই বিচিত্র্য উৎসবের তাৎপর্য কী?  আর প্যাচেন্দোটা কে?

এর উত্তরে স্থানীয় বাসিন্দা অ্যালভেরো হার্নান্দেজ জানালেন, প্যাচেন্দো একেবারেই কল্পিত একটি চরিত্র। আসলে ১৯৮৪ সালে গ্রামবাসীরা একটি স্থানীয় কার্নিভ্যালের অন্তসূচক একটি অনুষ্ঠান পালন করবে বলে স্থির করে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, একটি ছদ্ম-অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হবে। সেই সময়ে শহরে একটা নাটক এসেছিল ‘বারিয়াল অব প্যাচেন্দো’ নামে। গ্রামবাসীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেই নাটক। হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের অনুষ্ঠানের নাম আমরা স্থির করি ‘বারিয়াল অব প্যাচেন্দো’। ৫ ফেব্রুয়ারিকে যে এই বার্ষিক অনুষ্ঠানের জন্য স্থির করা হয়, সেটাও ওই রকম আকস্মিক সিদ্ধান্তেরই ফল।

আদপে এটা কোনো শোকানুষ্ঠানই নয়, বরং জীবনকে ভালোবাসার উৎসব। প্যাচেন্দোর মধ্য দিয়ে জীবনের মূল্য উপলব্ধি করেন গ্রামবাসীরা। অতএব শোক নয়, বরং জীবন্ত প্যাচেন্দোকে কবর দিয়ে জীবনেরই জয়গান গেয়ে যেতে চান সান্তিয়াগো দে লাস ভেগাসের মানুষ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত