মাদ্রাসা ছাত্র এসএমএসে জানাল ‘সে এখন আল্লার পথে’

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:০৬

‘মা, আমি ভাল আছি। আমার জন্য কোন চিন্তা করবা না। আমি আল্লার পথে চলে গেলাম।’ 

মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের ছয়দিন পর মায়ের ফোনে এসএমএসএ দিয়ে জানিয়ে দিল ১৬ বছরের ছেলে নেয়ামতুল্লাহ। ফোনে এসএমএস পাবার পর ছেলে জঙ্গী গোষ্ঠির খাতায় নাম লেখানো ছেলেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছে নিখোঁজ নেয়ামতুল্লাহর পরিবারসহ পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয়রা। ঘটনাটি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার। 

আগৈলঝাড়া থানা ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, উপজেলা সদরের আল জামিয়াতুল নাফিজিয়া আল ইসলামিয়া মার্কাস মাদ্রাসায় কওমী লাইনে দুই বছর যাবত পড়াশুনা করে আসছিল বাকাল গ্রামের খোরশেদ বেপারীর ছেলে নেয়ামতুল্লাহ বেপারী (১৬)। এর আগে নেয়ামতুল্লাহ হাফেজী মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। ১০দিন মাদ্রাসার ছুটি শেষে গত ২৭ নভেম্বর বাড়ি থেকে নেয়ামতুল্লাহ মাদ্রাসায় যায়। মাদ্রাসা থেকে ৩০ নভেম্বর জোরের নামাজ শেষে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় নেয়ামতুল্লাহ। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের ছাত্র নিখোঁজের ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয়নি। বাধ্য হয়ে ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় নেয়ামতুল্লাহর বাবা খোরশেদ বেপারী ৩ ডিসেম্বর আগৈলঝাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন, নং-১৩৯।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আল জামিয়াতুল নাফিজিয়া আল ইসলামিয়া মার্কাস মাদ্রাসা দেশী ও বিদেশী অর্থায়নে সরকারি নজরদারির বাইরে পরিচালিত হচ্ছে। ওই মাদ্রাসা থেকে এর আগেও একাধিক ছাত্র নিখোঁজ হয়েছিল। এছাড়াও অন্তত: তিনজন ছাত্রর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এসব মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আইনগত কোন সহযোগিতা নেয়ার কথা জানা জায়নি। ওইসকল ঘটনায় থানায়ও কোন মামলা হয়নি।
   
নিখোঁজ মাদ্রাসা ছাত্রর বাবা খোরশেদ বেপারী জানান, পেশায় তিনি একজন গাছ কাটা দিনমজুর। তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে নেয়ামতুল্লাহ মেঝ। প্রথমে নিখোঁজ ছেলে খোরশেদের পাঠানো এসএমএস অস্বীকার করলেও পরে তিনি স্ত্রীর ফোনে এসএমএস’র কথা স্বীকার করেন। 

নেয়ামতুল্লাহর মামা শাহাদাৎ হোসেন ফোনে জানান, নেয়ামতুল্লাহ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার ব্যবহৃত ০১৯৯২-৫৭৪৪৭৩ নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ফোন রিসিভের জন্য তাকে একাধিক এসএমএস দেয়া হয়। ওই এসএমএস পেয়ে নেয়ামতুল্লাহ শাহাদাতের ব্যবহৃত ০১৭৫৯-৬৪৬৩৭২ ফোনে সোমবার রাত ১টা ২২মিনিটে (০১৯৯২-৫৭৪৪৭৩) নম্বর থেকে একটি এসএমএস দেয়। তাতে লেখা রয়েছে ‘আমি এখন ডিউটিতে আছি। পরে ফোন দেব।’ কিন্তু পরে আর ওই নম্বর থেকে কোন ফোন আসেনি। 

শাহাদাত আরও জানান, তার বোন ও নেয়ামতুল্লাহর মা কোহিনুর বেগমের ০১৭৬৮-৪৬৪২৮১ ফোন নম্বরে তিনদিন আগে নেয়ামতুল্লাহর পাঠানো এসএমএস আসে। তাতে লেখা রয়েছে ‘মা, আমি ভাল আছি। আমার জন্য কোন চিন্তা করবা না। আমি আল্লার পথে চলে গেলাম।’

নেয়ামতুল্লাহর মা কোহিনুর বেগম জানান, তার ফোনে সোমবার দুপুরে নেয়ামতুল্লাহর ফোন থেকে এসএমএস আসে। তাতে লেখা ছিল ‘মা ক্ষমা কর, ভাল থাক।’ 

কোহিনুর বেগম আরও জানান, তার ছেলে খারাপ ছিল না। বাগধা মাদ্রাসায় পড়ালেখা করার সময় তার আচরনে অসঙ্গতি দেখা দেয়। পরে উপজেলা সদরের আল-আমীন মোহাম্মদীয়া জামে মসজিদের ইমাম জলিল বেপারীর চাচাতো ভাই হওয়ার সুযোগে তার মাধ্যমে ওই মসজিদে আযান দেয়া, নামাজ আদায় ও তাবলিক জামাতে যোগদান করে আসছিল নেয়ামতুল্লাহ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নেয়ামতুল্লাহর মা কোহিনুর বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরিশাল র‌্যাব-৮ কার্যালয়ে ডেকে নেয়া হয়েছে। মাদ্রাসায় গিয়ে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসা ছিল নীরব, নিস্তেজ। 

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, নেয়ামতুল্লাহ নিখোঁজ জিডির পর থেকেই আইনী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের নজরদারিতে থাকা মসজিদগুলোতে তার যাতায়াত, নিখোঁজ রহস্য উদ্ঘাটন ও বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত