আজ সাঁথিয়া মুক্ত দিবস

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:১৬

সাহস ডেস্ক

আজ ৯ ডিসেম্বর। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে শত্রুমুক্ত হয় সাঁথিয়া উপজেলা। বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে এদিন বিজয় উল্লাস করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধে সাঁথিয়াবাসীর যেমন গৌরব ও বীরত্বের ইতিহাস রয়েছে, তেমনি রয়েছে বেদনার ইতিহাসও। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামীর বাড়ি এ অঞ্চলে হওয়ায় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি এখানে গড়ে ওঠে। ফলে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী সাঁথিয়ার বিভিন্নস্থানে মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। সম্ভ্রম হারান এলাকার শতাধিক যুবতী ও নারীরা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, পাকসেনারা ১৯ এপ্রিল ডাববাগান (পরে শহীদ নগর), ১৪ মে ধুলাউড়ির বাউশগাড়ি গ্রাম, ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ি ফকিরবাড়িতে ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। ডাববাগানের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ইপিআর হাবিলদার মমতাজ আলী, হাবিলদার আব্দুর রাজ্জাক, নায়েক হাবিবুর রহমান, সিপাহী এমদাদুল হক, সিপাহী ইমান আলী, সিপাহী রমজান আলীসহ আরো অনেক ইপিআর সদস্য। পাকসেনারা ধুলাউড়ি বাউশগাড়ি গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে আটশ’ জন মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

২৭ মার্চ সাঁথিয়া পশু হাসপাতালের সামনে আমগাছের তলায় তৎকালীন ছাত্রনেতা (পরে যুদ্ধকালীন কমান্ডার) নিজাম উদ্দিন, রাবির ছাত্রনেতা ফজলুল হক, লোকমান হোসেন, রেজাউল করিম, আলতাব হোসেন, আবু মুছা, আবু হানিফ, আব্দুল ওহাব খান, সোহরাব আলী, আব্দুর রউফ, আব্দুল মতিন, গোলাম মোর্শেদসহ স্থানীয়রা প্রবল শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

ডিসেম্বরের ৭ তারিখে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়ায় প্রবেশের তিনটি ব্রিজ ও কালভার্ট বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। যাতে পাক সেনারা গাড়িবহর নিয়ে সাঁথিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে।

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের নিচে বাঙ্কার তৈরি করে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণে পাক সেনারা ক্ষতিগ্রস্ত দুটি গাড়ি ফেলে পিছু হটে ।

পরদিন ৮ ডিসেম্বর সাঁথিয়া ঢোকার পথে আবারো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে বিকেলের দিকে পিছু হটে পাক সেনারা। শেষের দিকে প্রবল প্রতিরোধের সময় সাঁথিয়ার একমাত্র নারী যোদ্ধা ভানু নেছা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থানা থেকে অস্ত্র ও গোলা বারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।  

এ দিকে ৯ তারিখে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া থানা দখলে নেয়। ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে সাঁথিয়া থানায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। যে কারণে ৯ ডিসেম্বরের পরে পাক সেনারা আর সাঁথিয়ায় ঢুকতে পারেনি। আর এ জন্যই সাঁথিয়াবাসী ৯ ডিসেম্বর সাঁথিয়া মুক্ত দিবস পালন করে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত