পাওয়া গেলো বঙ্গবন্ধুর চিঠি

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের তালিকায় নেই আব্দুর রব

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:০৩

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দেন। এমনই এক মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবার সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাঝিয়াড়া গ্রামের হোমিও চিকিৎসক ডা. সৈয়দ আব্দুর রব। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের বইয়ের তালিকায় নাম থাকলেও নেই শহীদ পরিবারের সরকারি তালিকায়। দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে হলেও বাড়িতে পাওয়া গেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত পাঠানো একটি চিঠি।

১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা (তৎকালীন খুলনা জেলাধীন) মাঝিয়াড়া গ্রামের ডা. সৈয়দ আব্দুর রবকে ধরে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী কপিলমুনি পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে। দুই দিন ধরে রবের উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। পরে গুলি করে হত্যার পর লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় কপোতাক্ষ নদীতে।

এ ঘটনায় ১৯৭২ সালের ৬ এপ্রিল শহীদ ডা. সৈয়দ আব্দুর রবের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান চিঠি দিয়ে সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। 

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য স্বামী আত্মৎসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি ও রইল আমার প্রাণঢালা সহানুভূতি। এমন নিঃস্বার্থ মহান দেশ প্রেমিকের স্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যি আপনি ধন্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আপনার পরিবারের সাহায্যার্থে আপনার সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের নিকট এক হাজার টাকার চেক প্রেরিত হলো।

শহীদ ডা. সৈয়দ আব্দুর রব দুই বিয়ে করেছিলেন। দুই স্ত্রীর ঘরে ৪ ছেলে ও ৬ মেয়ে। বড় ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহেল বাকী খসরু মারা গেছেন। ছোট ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফি মনজু বাবার রেখে যাওয়া মনোয়ারা ফার্মেসীকে ঘিরেই তার কর্মব্যস্ততা। বাবার মতই হয়েছেন হোমিও চিকিৎসক। এলাকায় সকলেরই পরিচিত মুখ ও সবার প্রিয় মনজু ডাক্তার।

শহীদ আব্দুর রবের ছোট ছেলে ডাক্তার সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফি মনজু জানান, তালা বাজারে মনোয়ারা ফার্মেসীতে বাবা জয় বাংলার পতাকা উড়িয়েছিলেন। পতাকা উড়ানোর পর পাকিস্তানি বাহিনীরা পতাকা খুলে নিয়ে যায়। বাবা এ সময় দোকানে ছিলেন না। এরপর ১ আগস্ট দোকান থেকে বাবাকে পার্শ্ববর্তী কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। সেখানে দুইদিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৩ আগস্ট রাতে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীতে মরদেহ কপোতাক্ষ নদীতে ফেলে দেয়। ভয়ে লাশটি আনতে যাওয়ার সাহস পায়নি কেউ। 

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান মাকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও আর্থিক সহায়তা পাঠান। তবে সেই চিঠিটি অরক্ষিতভাবেই থেকে যায় সকলের অগচরে। কিছু দিন পূর্বে বাড়ী থেকে পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর পাঠানো সেই চিঠি খানা। এদিকে চিঠিটি পাওয়ার পর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নিকট শহীদ পরিবারের তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য একটি আবেদন পত্র দিয়েছি।

এ বিষয়ে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজ উদ্দীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বইয়ের যে তালিকা সেখানে ডা. সৈয়দ আব্দুর রবের নাম রয়েছে। 

চিঠির বিষয়টি অবহিত করে এই পরিবারটি শহীদ পরিবারের অন্তভূক্ত হতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দীন বলেন, যাচাই বাছাই করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত