২০ হাজার টাকার জন্য টিউমার বয়ে বেড়াচ্ছেন শিশু নুরনাহার

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:২৮

পাবনা প্রতিনিধি

৯ বছরের ফুটফুটে মেয়ে নুরনাহার। এই বয়সে তাকে নিয়ে আনন্দে আহলাদে থাকার কথা বাবা-মায়ের। হাসিখুশিতে উচ্ছল থাকার কথা ছোট্ট মেয়েটিরও। কিন্তু সবার আনন্দ আর খুশি যেন হারিয়ে গেছে কোথাও। কখনো খেলার জন্য তার বয়সী শিশুদের কাছে গেলে অন্যরা ভয়ে পালিয়ে যায় তাকে দেখে। তখন একা-নিঃস্ব হয়ে পড়ে নুরনাহার। এ কারণে সব সময় মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে থাকে তার। সবাই যখন মজা করে তখনও চুপচাপ থাকে সে।

কোমরের নিচে (পেছনের অংশে) টিউমার হয়েছে নুরনাহারের। বেশ বড় আকৃতির। এ কারণে কখনো বসতে পারে না সে। না পারে দৌড়াতে, না পারে শান্তিমতো ঘুমাতে। ব্যথা না থাকলেও অসুবিধার যেন শেষ নেই কোনো কিছুতেই। তবুও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে সে। স্থানীয় সিন্দুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী নুর নাহার। মেয়ের অসুখের চিন্তায় ঘুম আসেনা দরিদ্র বাবা-মা’র। ঘর আলো করে পৃথিবীতে আসলেও নুরনাহারের শরীরের টিউমার অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে পরিবার-স্বজনদের। অর্থের অভাবে ভাল চিকিৎসক দেখানো বা অপারেশন করতে পারছেন না নুরনাহারের হত-দরিদ্র বাবা-মা।

পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার কাপাসডাঙ্গা মন্ডলপাড়া গ্রামের দিনমজুর সিদ্দিক মন্ডলের মেয়ে নুরনাহার। নিজের জমি বলতে কিছু নেই। কয়েক শতক জমির উপর বাড়িটুকু তার সম্বল। অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে চলে তার ৫ সদস্যের সংসার। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় জন্ম নেয় সিদ্দিক-হাসি দম্পতির প্রথম কন্যা সন্তান নুরনাহার। যার বর্তমান বয়স ৯ বছর। স্থানীয় সিন্দুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীতে পড়ছে সে। পরে আরো দু’টি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় তাদের সংসারে। মেঝো মেয়ে নুপুরের বয়স ৬, সে একই স্কুলের শিশু শ্রেণীর ছাত্রী। আর সবার ছোট মেয়ে নুরাইয়া’র বয়স দেড় বছর।

আলাপকালে সিদ্দিক মন্ডল জানান, নুরনাহারের জন্মের পর থেকে তার পাছায় ছোট টিউমার ধরা পড়ে। তবে তেমন বোঝা যায় নাই। তবে দিন যত যাচ্ছে, মেয়ে বড় হওয়ার সাথে টিউমারও বড় হচ্ছে। মেয়েটার ৩ বছর বয়সে প্রথম অবস্থায় পাবনার হামিদা ক্লিনিক ও মিতু ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাইছি, কাশিনাথপুরের স্থানীয় একজন ডাক্তারকেও দেখাইছি। কিন্তু তারা সবাই বলছেন, এই টিউমার অপারেশন করা যাবেনা, করলে মেয়ে বাঁচবে না। এই চিন্তা থেকে আমি আর পরে কোনো ডাক্তারকে দেখাইনি। একজন ঢাকায় নেবার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমার আর্থিক অবস্থা তেমন নয় যে ঢাকায় নিয়ে যাবো চিকিৎসা করাতে। দিনমজুরী করে যা পাই, তাই দিয়ে কোনোমতে সংসার খরচ চালাই। তাই গত ৬ বছর ধরে এই অবস্থায় আছি। মেয়েকে আর ঢাকায় নিতে পারি নাই।

নুরনাহারের মা হাসি খাতুন বলেন, দিন যত যাচ্ছে মেয়ে বড় হচ্ছে, টিউমারও বড় হচ্ছে। সমাজে অন্যরাও ভাল চোখে দেখেনা। মেয়েটা সবার সাথে হাসিখুশিতে মিশতেও পারেনা। নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হয়। মেয়েটাকে নিয়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয়না। আবার মেয়েটার যে চিকিৎসা করাবো আমার স্বামীর যে সামর্থ্যও নেই। তবে প্রথম দিকে একটু চেষ্টা করেছিল আমার স্বামী। কিন্তু ডাক্তাররা বলছে ভাল হবেনা। তাই আর চেষ্টা করা হয়না। তবে আমরা চাই মেয়েটা সুস্থ্য হয়ে উঠুক। তাকে যদি অপারেশনের মাধ্যমে সুস্থ্য করে তোলা যায় সে সহযোগিতা চাই। সমাজের কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে ঢাকায় নিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করে তাহলে খুব খুশি হবো আমরা।

গত ২২ জানুয়ারি রোববার বিকেলে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় নুরনাহারকে নিয়ে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সিরাজুল ইসলামের শরনাপন্ন হন নুরনাহারের বাবা ও চাচা। নুরনাহারকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন ও একটি এক্স-রে করে দেখেন ডা. সিরাজুল ইসলাম।

তিনি জানান, নুরনাহারের টিউমারটি জন্মগত। মেডিকেলের ভাষায় এ ধরনের টিউমারকে ‘সেক্রো কক্সিজিয়াল টেরাটোমা’ বলা হয়। মেরুদন্ডের নার্ভের সাথে সংযোগ থাকতে পারে টিউমারের, তাই অপারেশনে একটু ঝুঁকি আছে। তারপরও অপারেশন করা সম্ভব এবং রোগী সুস্থ্য হবে। ডা. সিরাজুল আরো জানান, এই অপারেশন যেকোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে করা যাবে, সেখানে অপারেশনের জন্য কোনো খরচ হবে না, শুধু ওষুধপত্রের কিনতে হবে। সবমিলিয়ে ২০ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। আর বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অপারেশন করালে এক লাখ টাকার মতো খরচ হবে।

কিন্তু এই টাকাও জোগাড় করার ক্ষমতা নেই দিনমজুর বাবার। তিনি মেয়ের সুস্থতার জন্য সমাজের হৃদয়বানদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। নুর নাহারের ব্যাপারে আরো জানতে যোগাযোগ করতে পারেন তার মামা হাসমতের মোবাইল ০১৭৮০-৪৫১৪৮০ নম্বরে (বাবার মোবাইল নেই)। নম্বরটি বিকাশ করা রয়েছে। এছাড়া মোবাইল নম্বরটির শেষে ৮ যোগ করে সাহায্য পাঠাতে পারেন ডাচ্-বাংলা-রকেটের মাধ্যমেও। সবার ভালবাসায় ও সহযোগিতায় হাসি ফুটতে পারে ছোট্ট নুরনাহার ও তার স্বজনদের মুখে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত