মিরপুর মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:৫৯ | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:৩০

অনলাইন ডেস্ক

মিরপুর মুক্ত দিবস আজ। ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলেও সেই বিজয়ের ৪৬ দিন পর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ‘৭২ সালের এই দিনে মুক্ত হয় রাজধানীর উপকণ্ঠ মিরপুর। মুক্তিযুদ্ধের এই শেষ রণাঙ্গনে শহীদ হন প্রায় অর্ধ শতাধিক।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও সেই ঢাকারই মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা তখনো শত্রুমুক্ত হয়নি। ‘৭২-এর জানুয়ারি পর্যন্ত অবাঙালি রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সমর্থনে এখানে ঘাপটি মেরে ছিলো একদল পাকিস্তানি সৈন্য।

৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পরও ঢাকার মিরপুরে চলছিল যুদ্ধ। মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছিল পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর অবাঙ্গালি বিহারীরা এবং কিছু সংখ্যক রাজাকার আলবদর। প্রায় এক ব্রিগেড পাকিস্তানি সেনা তাদেরকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ভিতর এক পরাধীন বাংলা। এমনকি মিত্রবাহিনীও এ এলাকায় প্রবেশের সাহস করেনি। মুক্তিযোদ্ধারা একাধিকবার মিরপুরে প্রবেশ করতে চাইলেও মিত্রবাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শত্রুশক্তি অনুমান করে তাদেরকে বিরত রাখে।

১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর সিদ্ধান্ত হয় ৩০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সকল মুক্তিযোদ্ধা তার কাছে থাকা অস্ত্র জমা দেবে। এজন্য ওই দিনই মিরপুর মুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ মিরপুর মুক্ত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তার আগে অস্ত্র সমর্পণ করতে বলা হয়েছিল শত্রুদের কিন্তু উল্টো তারা মাইকে ঘোষণারত পুলিশ সদস্যকেই হত্যা করে। ৩ প্লাটুন সেনা সদস্যের সহায়তায় অপারেশনে অংশ নেয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও। কিছু ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুপক্ষের সমরশক্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকায় যুদ্ধের প্রথম অগ্রাভিযানেই নিহত হন বাঙালি সেনা ও পুলিশের ১২২ জন সদস্য। শত্রুর অতর্কিত হামলায় শহীদ হন সেনাবাহিনীর লে. সেলিম, পুলিশের এএসপি জিয়াউল হক খান লোদী। শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ।

৩১ জানুয়ারি ১৯৭২। আক্রমণে এক সময় পরাস্ত হয় শত্রু, মুক্ত হয় বাংলাদেশের শেষ পরাধীন ভূমি। স্বাধীন বাংলাদেশেও শতাধিক শহীদের আত্মবলিদানের মর্মান্তিক ইতিহাসের স্বাক্ষী মিরপুরবাসী। মিরপুর শত্রুমুক্ত হওয়ার পর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে রাজাকার-আলবদর-বিহারীদের পৈশাচিক বিভত্সতার স্বাক্ষী বধ্যভূমিগুলো। এ পর্যন্ত ১০ টি বধ্যভূমি সনাক্ত করা হয়েছে মিরপুরে। ১৯৯৯ সালে মিরপুরের মুসলিম বাজার বধ্যভূমি আবিষ্কারের পর জহির রায়হান, লে. সেলিমসহ আরো যারা ওই অপারেশনে শহীদ হয়েছিলেন তাদের হত্যারহস্য কিছুটা উদঘাটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের এরকম অনেক অনুদঘাটিত ইতিহাসের স্বাক্ষী মিরপুর। সমগ্র মিরপুর ছিল রাজাকার-আলবদর-বিহারীদের অভয়ারণ্য। অবাধে বাঙালি নির্যাতন আর হত্যার জন্য পুরো মিরপুর ছিল শত্রুর কাছে জল্লাদখানা।