শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহারে ২৬৭ বিলাসবহুল গাড়ি চিহ্নিত

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:২০

সাহস ডেস্ক

শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে ২৬৭টি বিলাসবহুল গাড়ি ও পাসবুক চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

আমদানি করা এসব গাড়ির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশি নাগরিকরা এরই মধ্যে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে এনবিআরের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠান কিংবা উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থায় কর্মরত যেসব বিদেশি নাগরিক দেশ ত্যাগ করেছেন কিংবা যাদের কাস্টমস পাসবুকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। যেখানে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ কাস্টমস পাসবুক ও গাড়ি জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠান কিংবা উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থায় কাজ করেছেন কিন্তু এখন দেশ ত্যাগ করেছেন কিংবা কাস্টমস পাসবুকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে- এমন বিদেশি নাগরিককে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কাস্টমস পাসবুক ও ব্যবহৃত গাড়ি জমা দেওয়ার জন্য এনবিআর থেকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিক পাসবুক ও গাড়ি জমা না দিয়ে দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কাস্টমস পাসবুক ও গাড়ি জমা না দিয়ে ৩৯৫ জন বিদেশি নাগরিক এনবিআরের ওই নির্দেশনা অনুসরণ করেননি। তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এনবিআর।

এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ২১ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাস্টমস পাসবুকের বিপরীতে আমদানি করা ২৬৭টি বিলাসবহুল গাড়ি ও কাস্টমস পাসবুক জমা না দিয়েই দেশ ত্যাগ করেছেন। মোট ৩৮টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার বিদেশি নাগরিককে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ি বা মোটরসাইকেলসহ কাস্টমস পাসবুক নবায়ন বা জমা দেওয়ার জন‌্য এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয় এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ। কিন্তু অধিকাংশ সংস্থা এনবিআরের ওই চিঠিতে সাড়া দেয়নি।

এনবিআরের তথ্যানুসারে জার্মানিভিত্তিক সংস্থা জিআইজেড অবৈধভাবে ১৯টি গাড়ি, বিশ্বব্যাংক ২০টি গাড়ি, ইউনিসেফ ৩৩টি গাড়ি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি ৫১টি গাড়ি বিক্রি বা হস্তান্তর করেছে। এ ছাড়া ডিআইএফডি তিনটি গাড়ি, আইসিডিডিআরবি আটটি, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কেওআইসিএ) পাঁচটি, ইউএনএফপিএ নয়টি, ডব্লিউএফপিএ আটটি, এশিয়া ফাউন্ডেশন পাঁচটি, আইএলও ছয়টি, এফএও ১১টি এবং ড্যানিডা ছয়টি গাড়িসহ মোট ২৬৭টি গাড়ি অবৈধভাবে হস্তান্তর বা বিক্রি করেছে।

এনবিআরকে চিঠি দেওয়া ৩৮ সংস্থার মধ্যে মাত্র ১৪টি সংস্থা চিঠির উত্তর দিয়েছে। তবে ২৪টি সংস্থা এখনো কোনো উত্তর দেয়নি। যদিও ১৪টি সংস্থা যে উত্তর দিয়েছে তাও ছিল অসম্পূর্ণ এবং গাড়িগুলোর বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কয়েকটি সংস্থা কাস্টমস পাসবুক জমা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করেছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের ওই কর্মকর্তা জানান, এনবিআর সংস্থাগুলোর নথিপত্র যাচাই-বাছাই করছে। যেসব সংস্থা চিঠির উত্তরে সময় চেয়েছে, তাদের আবেদন বিবেচনা করা হবে। অন্যদিকে যেসব সংস্থা এখনো চিঠির উত্তর দেয়নি তাদের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেওয়া হবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও যারা পাসবুক ও গাড়ি জমা না দেবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভ‌্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম‌্যান মো.নজিবুর রহমান জানান, এনবিআর আইন অনুযায়ী কাজ করছে। এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও হয়েছে। সংস্থার প্রধানদের সুপারিশ অনুযায়ী যাদের পাসবুক দেওয়া হয়েছিল, কেউ যদি চলে যায় তা এনবিআরে জমা হয়েছে কি না কিংবা ব‌্যবহারকালে কোনো অপব‌্যবহার হয় কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। কারণ সে বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানের।

এদিকে ১৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাস্টমস পাসবুকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও জমা না দেওয়ায় বা আবেদন না করায় ১৬টি গাড়ি ও পাসবুক তলব করে শুল্ক তদন্ত ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

কাস্টমস আইন অনুযায়ী কূটনৈতিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির কোটায় গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে থাকে। তবে শুল্ক আইন ও এসআরও-২৩৭ অনুযায়ী কোনো কূটনৈতিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির পদবি ও কর্মস্থল পরিবর্তন হলে কাস্টমস পাসবুক ও শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ি এনবিআরে জমা দিতে হয়। আর এ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বা উন্নয়ন অংশীদারের প্রধানের ওপর দায় বর্তায়।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, যদি ওই সংস্থা বা ব্যক্তি ৬০ কর্মদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ওই আইনের ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে শুল্ক গোয়েন্দা চাইলে ওই গাড়ি জব্দ করতে পারে। এমনকি কাস্টমস আইন অনুসারে মামলা দায়ের ও নির্ধারিত শুল্কের ১০ গুণ অর্থ আদায় করতে পারে।কূটনৈতিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির কোটায় গাড়ি আমদানি করে শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করা হয়েছে- এমন ২৬৭টি বিলাসবহুল গাড়ি ও পাসবুক চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত