তিস্তা ব্যারাজে পানির দাবিতে রোডমার্চ শেষে সমাবেশ

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৫৩

আসাদুজ্জামান সাজু

মমতা ও মোদীর দ্বন্দ্ব’র কারণে আমারদের তিস্তা চুক্তি হবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এপ্রিলে প্রধান মন্ত্রী ভারতে যাবে, কি আনবেন জানি না। তবে তাকে পানি আনতেই হবে। আমরা পানি নিয়ে আর অপেক্ষা করতে চাই না। আওয়ামীলীগ-বিএনপি গদি নিয়ে লড়াই করে, তাহালে নদী নিয়ে এত ঝামেলা কেন? এ জাতি তা জানতে চায়।

তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বাসদের বগুড়া থেকে তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে রোড মার্চ শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে তিস্তা ব্যারাজ সাধুর বাজারে সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন।

সমাবেশ জানানো হয়, আগামী ৩০ মার্চ পানির দাবীতে প্রধান মন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।

গত বুধবার বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের উদ্যোগে রোডমার্চ বগুড়া শহরের সাতমাথায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।

কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজের সভাপতিত্বে সমাপনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ, সদস্য কমরেড জাহেদুল হক মিলু, কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, কমরেড আব্দুল কুদ্দস, কমরেড জয়নাল আবেদিন মুকুল, কমরেড নব কুমার কর্মকার, কমরেড দেবাশীষ রায়, কমরেড সাইফুল ইসলাম পল্টু প্রমুখ।

বুধবার শুরু হওয়া এ রোডমার্চ পথিমধ্যে মহাস্থানগড়, মোকামতলা, ফাঁসিতলা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, শঠিবাড়ীতে সমাবেশ করে রংপুরে রাত্রীযাপন করেন। বৃহস্পতিবার রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী থেকে মেডিকেল মোড়, পাগলাপীর, তারাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জলাঢাকা হয়ে তিস্তা ব্যারাজে এসে সমাপনী সমাবেশ করেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী, পরিবেশবিরোধী ভারতের এহেন সর্বনাশা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরকার কোন প্রতিবাদ করছে না। উপরন্তু তাদের কৃপায় ক্ষমতার মসনদ দখলে রাখার জন্য তিস্তার পানি না পেলেও বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার, ট্রানজিটসহ বিভিন্ন সুযোগ ভারতকে দিয়ে চলছে। বিএনপিও ভারতকে তুষ্ট রেখে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর জাতীয় পার্টি, ওরা যত কথাই বলুক, ওরা সত্যি ভারতপুজারী। দেশ ও জনগণের স্বার্থে তাদের কোন পদক্ষেপ নেই।

বক্তারা বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুকরণের হুমকির মুখে। উজানে একতরফা পানি সরিয়ে নেওয়ার ভারতীয় আগ্রাসী তৎপরতা ও দেশের ভেতরে সরকারের নতজানু, ভ্রান্তনীতি ও দখল-দূষণে ১ হাজান ২শ’টি নদী কমে ২শ’ ৩০টিতে নেমে এসেছে। নদীর চেহারা খালে পরিণত হয়েছে।

বাসদ কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি নদী যা ভারতের ভিতর দিয়ে এসেছে তার অধিকাংশের উজানে বাঁধ দিয়ে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি লংঘন করে স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তিস্তার উজানে বাঁধ দেয়ায় রংপুর অঞ্চলেও পানি সংকটে চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প চালু করে তিস্তা-পদ্মার পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে পুরো মরুভূমির দিকে ঠেলে দিচ্ছে ভারত। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তায় এবারে শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই পানি প্রবাহ আশংকা জনকভাবে কমে গেছে। গত ২০ জানুয়ারি তিস্তার পানি প্রবাহ ছিলো ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৪০০ কিউসেক।

তারা সমাবেশে বলেন, বাসদসহ বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কেউই কর্ণপাত করছে না। জোট-মহাজোটের ভোটের রাজনীতির কাছে দেশ, জনগণ, নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ কোনো কিছুই গুরুত্ব পায় না।

বাংলাদেশকে মরুভূমি বানানোর আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাতিলের জন্য ভারত সরকারকে বাধ্য করতে ভারতীয় জনগণ যাতে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ, প্রয়োজনে জাতিসংঘে উত্থাপনের দাবি জানান বক্তারা। তারা সাম্রাজ্যবাদী ভারত সরকারের পানি আগ্রাসন বন্ধের দাবি ও বাংলাদেশের নতজানু শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত