৩ মার্চ স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০১৭, ১৯:১৬
একাত্তরের ৭মার্চের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ মাসেই আরো একবার স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন। তিনি না থাকলেও বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন যেন না থেমে যায়- সেজন্য তিনি সবার প্রতি উদত্ত আহবান জানিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি মরে গেলেও ৭ কোটি মানুষ দেখবে দেশ সত্যিকার স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, হয়তো এটাই আমার শেষ ভাষণ। আমি যদি নাও থাকি আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলন যাতে না থামে।’
একাত্তরের ৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ এবং শ্রমিকলীগের উদ্যোগে এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু এ আহবান জানান। পরদিন ৪ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক এবং আজাদে সভার বিস্তারিত ছাপা হয়।
নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বঙ্গবন্ধুকে বাংলার স্বাধীকার আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। জনসভায় বক্তব্য রাখেন তোফায়েল আহমেদ, শ্রমিক নেতা আবদুল মান্নান এবং ডাকসু নেতা আবদুল কুদ্দুস মাখন। অজ্ঞাত কারণে এদিন আ স ম আবদুর রব বক্তৃতা করেননি। তার বক্তৃতা দেয়ার পূর্বেই বঙ্গবন্ধু সভায় পৌছে যান।
ড. মোহান্মদ হান্নান তার ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ গ্রন্থে এব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি লিখেন বঙ্গবন্ধু এদিন ভাষনে অফিস আদালতে যাওয়া এবং কর খাজনা দেয়া বন্ধ রাখতে বলেন। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদ পত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করলে তিনি তা লঙ্ঘন করার নির্দেশ দেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, দানবের সাথে লড়াইয়ে যে কোন পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজন বোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়া দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলা বীর শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করব না।
এর আগে ৩ মার্চ রাজিনৈতিক পরিস্থিতি পর্যলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় পাকিস্থানের নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটি বৈঠক ডাকেন। আমন্ত্রিতদের তালিকায় উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন পাকিস্তান আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তান পিপলস পার্টি থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টো, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে খান আবদুল ওয়ালী খান, পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাইউম) থেকে খান আবদুল কাইউম খান, মুসলিম লীগ কাউন্সিল থেকে মিয়া মোমতাজ দৌলানা প্রমুখ ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এই রাজনৈতিক সভাকে বন্দুকের নলের মুখে ‘নিষ্ঠুর তামাশা’ বলে অভিহিত করে তা প্রত্যাক্ষাণ করেন।
ড. মোহাম্মদ হান্নান তার গ্রন্থে লিখেছেন, পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার কথা বলায় উদ্বেলিত মানুষ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, গ্রামে গ্রামে দূর্গ গড় : মুক্তিবাহিনী গঠন কর শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে। সভা থেকে এ দিন ৪ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহবান জানানো হয়। ৫ মার্চ বায়তুল মোকারম থেকে একটি লাঠি মিছিল বের করারও কর্মসূচি ঘোষিত হয় ।
এ দিকে ৩ মার্চ সারাদেশে পূর্ণ হরতাল শেষে ডাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেটে গোলযোগ হয়। পরদিন দৈনিক আজাদের খবরে বলা হয় , এদিন রাজশাহীতে টেলিফোন অফিসের সামনে সামরিক বাহিনীর গুলিতে আহতদের স্থানীয় মুসলীম কমার্শিয়াল ব্যাংকের বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। এ সময় আহতদের কয়েকজন ব্যাংকের দেয়ালে তাদের দেহ থেকে নিঃসারিত রক্ত দিয়ে ‘বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ কথা লেখেন।