আতিয়া মহলে ২ জঙ্গি নিহত, অভিযান চলছে

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০১৭, ০০:০৪

সাহস ডেস্ক

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় ‘আতিয়া মহল’র জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন টোয়ালাইটে’ দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। ভেতরে আরও এক বা একাধিক জঙ্গি আছে। জঙ্গিরা মহলের ভবনটির নিচ তলায় আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পেতে রাখায় সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, এ কারণে সেখানে সতর্কতার সঙ্গে অভিযান চালাতে হচ্ছে। তাই অভিযান কবে শেষ হবে বলা যাচ্ছে না, তবে জঙ্গিদের নিউট্রালাইজ (নিষ্ক্রিয়) করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।

২৬ মার্চ (রবিবার) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে অভিযানস্থলের পাশে কদমতলীর পাঠানপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনের ঈদগাহে ব্রিফিং করে এসব কথা জানান সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। 

২৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দিনগত রাত থেকে টানা ৩০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখার পর ২৫ মার্চ (শনিবার) সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে শুরু হয় ‘অপারেশন টোয়ালাইট’। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বে পুলিশ ও সোয়াট বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে টানা ৩৩ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালাচ্ছেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। ২৫ মার্চ (শনিবার) ভোর থেকে অভিযানস্থল এবং এর আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। অভিযানস্থল পুরোপুরি কর্ডন করে রেখেছেন সেনাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল, ভেতরে জিম্মি থাকা বাড়িটির বাসিন্দাদের উদ্ধার করে নিরাপদে বাইরে নিয়ে আসা। ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে উদ্ধারের মাধ্যমে আমরা সেটি সফলভাবে করতে পেরেছি। এখন লক্ষ্য হচ্ছে, অভিযান পরিচালনাকারী নিজেদের সদস্যদের নিরাপদে রেখে জঙ্গি নির্মূল করা।’

‘যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে, নিচ থেকে জায়গায় জায়গায় আইইডি লাগানো। নড়াচড়া করাও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যেও আমাদের কমান্ডোরা ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করছেন।’ 

ব্রি.জে.ফখরুল আহসান বলেন, ‘নিশ্চিত করে বলতে পারছি না ঠিক কখন অপারেশনটা শেষ হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। মহলের বাসিন্দাদের উদ্ধার করা ছিল প্রথম লক্ষ্য। সে কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে পেরেছি। এখন তাড়াহুড়ো নেই। সতর্কভাবে কাজ করছি। কমান্ডোরা বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছেন।’

ভেতরে জঙ্গি থাকার বিষয়ে সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, কতজন জঙ্গি ভেতরে আছে। তবে এক বা একাধিক ভেতরে আছে। দুই জঙ্গি দৌড়াদৌড়ি করার সময় আমাদের কমান্ডোরা তাদের গুলি করেছে। তারপর তাদের পড়ে থাকতে দেখা গেছে গ্রাউন্ড ফ্লোরে। এখন যারা আছে, তাদের মধ্যে কোনো নারী সদস্য আছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নই। তবে থাকতে পারে।’

জঙ্গিরা অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত জানিয়ে ব্রি. জে. ফখরুল আহসান বলেন, ‘তাদের কাছে স্মল আর্মস আছে, আইইডি আছে, তারা অস্ত্র-শস্ত্র সজ্জিত। আমরা গ্রেনেড চার্জ করার পর তারা উল্টো আমাদের দিকে সেটা ছুড়েছে। সবার গায়ে সুইসাইডাল ভেস্ট আছে। আর স্মল আর্মস দিয়ে ফায়ার করছে।’

তবে কমান্ডোরা সবাই নিরাপদে আছেন এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা।

অভিযান শুরুর পর থেকে শনিবার দুপুর নাগাদ ওই বাড়িতে জিম্মি হয়ে থাকা ২৮ পরিবারের ৭৮ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনী। তবে অভিযান চলাকালেই শনিবার রাতে অভিযানস্থলের বাইরে ৩০০ গজ উত্তরের রাস্তায় দু’দফা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন, আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যসহ ৩২ জন।

নিহতদের মধ্যে আছেন- জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো.আবু কয়সার। তারা দু’জনই পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্য ছিলেন। অপর নিহতরা হলেন- দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের উপ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফাহিম, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম অপু, নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা ডেকোরেটর ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ও খাদিম শাহ।

ওই বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিস্ফোরণস্থল ফিতা টানিয়ে সুরক্ষিত করে রেখেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত