জঙ্গি সন্দেহে রাবির তিন শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:০০

রাবি প্রতিনিধি

ফেসবুকে জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রচারণা চালানোয় তিন শিক্ষার্থীকে জঙ্গি সন্দেহে পুলিশে সোপর্দ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর থেকে তাদের পুলিশে দেয়া হয়।

আটককৃতরা সবাই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের জুবায়ের হোসেন, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের আল তৌফিক সানি, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের মাকসুদুল হক। এদের মধ্যে জুবায়ের হোসেনের বাড়ি নরসিংদী জেলার শেরপুর থানায়। তার বাবার নাম আকবর আলী। আল তৌফিক সানির বাড়ি পাবনা জেলায় ও মাকসুদুল হকের বাড়ি কিশোরগঞ্জ।

জানা যায়, জুবায়ের হোসেন তার ফেসবুক একাউন্ট (মধ্যরাতের অশ্বারোহী) থেকে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লেখা পোস্ট এবং শেয়ার করে আসছিল। বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় তাকে টুকিটাকি চত্বরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তার স্মার্টফোনে আইএস জঙ্গিদের যুদ্ধের একাধিক ভিডিও এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করা গানের ভিডিও পাওয়া যায়। এছাড়া তার ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ছদ্মনামে থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মেসেজ চালাচালির প্রমাণ পায় ছাত্রলীগ। দেড় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জুবায়ের জিহাদে সমর্থন থাকার কথা স্বীকার করেন।

জুবায়ের সাংবাদিকদের কাছে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ফেসবুকে কিছুদিন ধরে কয়েকজনের জিহাদী পোস্ট পড়ে আন্তরিকভাবে ‘মহব্বত’ চলে আসে। চার-পাঁচদিন আগে তারা আমার বন্ধু হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই জিহাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছি। জিহাদ ও জঙ্গীবাদ সম্পর্কে জানতে পারছি। তাদেরকে আমি চিনি না বা কখনও দেখাও হয়নি। তারা আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাক-আমেরিকার যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দিত।

রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জানান, জুবায়েরের ফেসবুক আইডি থেকে মেসেজ বিনিময়ের সূত্র ধরে তার সহযোগী মাকসুদুল হককে শনাক্ত করা হয়। তার ফেসবুক নাম পরবর্তী স্টেশন কবর। পরে তাকেও টুকিটাকি চত্বরে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতারা। একই সময়ে টুকিটাকি চত্বরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করায় আল তৌফিক সানি নামের আরেক শিক্ষার্থীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার ব্যাগে ১৬টি সিম পাওয়া যায়। ছাত্রলীগের ধারণা এই দুই শিক্ষার্থী জুবায়েরের সহযোগী। পরে বিষয়টি নগরীর মতিহার থানায় অবগত করা হলে পুলিশ ওই তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

মুঠোফোনের জিহাদী ভিডিও এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করা ভিডিও সম্পর্কে আটক জুবায়ের বলেন, দুই বছর আগে হুসাইন নামের নরসিংদীর এক আলেমের কাছ থেকে ভিডিওগুলো পেয়েছি। ভালো লাগায় সেগুলো রেখে দিয়েছি। হুসাইন এখন রাজধানীর এক মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, জুবায়েরের সঙ্গে জঙ্গিদের বড় কোন নেটওয়ার্কের সম্পর্ক থাকতে পারে। অন্য দুজনের আচরণও সন্দেহজনক মনে হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে নগরীর মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, জঙ্গি সন্দেহে তিন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক করা হয়েছে। তারা ফেসবুকে জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছিল বলে ছাত্রলীগ অভিযোগ করেছে। আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত