‘প্রধান বিচারপতি কীভাবে বললেন এদেশে আইনের শাসন নেই’

প্রকাশ : ০৯ মে ২০১৭, ১০:৩৯

সাহস ডেস্ক

আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে প্রধান বিচারপতির সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না, তিনি কীভাবে এটা বললেন, এদেশে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে বলেই একজন নেত্রীর মামলায় ১৪০ দিন সময় দিয়েছে আদালত। আমাদের যদি এ ধরনের মানসিকতা থাকতো তাহলে এটা দিতে পারতো না। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই মামলায় যদি ৪০ বা ৫০ বার রিট হয় এবং তা যদি গৃহীত হয়, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই কোথায়। স্বাধীনতা না থাকলে এটা হতো না। এটাই বড় দৃষ্টান্ত। আর যারা এ সুযোগ নিচ্ছেন। তারাও এর সাথে তাল মিলিয়ে বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই।

সোমবার (৮ মে) দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এদেশে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্বাধীনতা রয়েছে, বাকস্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। তবে স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্বশীল হতে হবে। একজনের যেটা অধিকার, আরেকজনের জন্য সেটা দায়িত্ব। কারো অধিকার ক্ষুন্ন করার নাম স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা যদি কেউ ভোগ করতে চায়, তাহলে তাকে সেই দায়িত্ববোধ নিয়েই করতে হবে। এটাই বাস্তবতা।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশে এখন ৩৪টি টেলিভিশন, ৭৫০টি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। অথচ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এদেশে নাকি মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই। বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে বসে টকশোতে দিন-রাত সরকারের বিরুদ্ধে সমানে কথা বলা হচ্ছে। টকশো, আলোচনায় যে এতো কথা বলা হচ্ছে, কেউ কি তাদের বাধা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, কেউ যদি হলুদ সাংবাদিকতা করে, অসত্য তথ্য দেয়, কারো যদি চরিত্র হরণ করা হয়, নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরও অধিকার রয়েছে, সে মিথ্যাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করার। কিন্তু এখানে কেউ যদি বলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, তা ঠিক নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কিছু মানুষ রয়েছে, যারা এক সময় মনে করতো দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে তাদের গুরুত্ব বেড়ে যাবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশে এ সুযোগ কম থাকে। তাদের স্বাদ আছে ক্ষমতায় আসার, কিন্তু জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ার সাধ্য নেই। অনেকে চেষ্টাও করেছেন, কিন্তু জনগণের সাড়া পাননি। জনগণ যদি সাড়া না দেয়, সে দোষ কার? এরাই নানান কথা বলে বেড়াবে, এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, সংসদ সদস্য থেকে যে কোন সাধারণ মানুষ তার ব্যাপারে অসত্য তথ্য ছাপা হলে তিনি সম্মানহানির মামলা করতে পারেন। তবে কেউ যদি মনে করে যে সে অপরাধী না, তাহলে সে প্রমাণ করবে যে সে অপরাধী না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বদনাম করাই তাদের চরিত্র। তারা মনে করে বদনাম করতে পারলেই তারা এসে তাদের নাগরদোলায় চড়িয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সে আশায় তারা বসে থাকে। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি। সেটা আর বাংলাদেশে হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরলেই বিএনপি নেত্রী তাদের জন্য মায়াকান্না করেন। এর সাথে যোগসূত্র কি। বিএনপির সাথে জঙ্গিদের সম্পর্ক কোথায়? অবশ্য বিএনপির সময় জঙ্গিবাদের সূচনা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এখানে প্রতিনিয়ত বন্যা, খরা এগুলো হচ্ছে। তবে এখন হাওরে যে অকাল বন্যা হয়েছে, এ বন্যা মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তার সবকিছুই করা হবে।

তিনি বলেন, সুন্দর ও চমৎকার পরিবেশে সংসদ চলছে। এখন এখানে কোন খিস্তিখেউর নেই। সংসদে সঠিকভাবে গণতান্ত্রিক চর্চা হচ্ছে। বিএনপি সংসদে থাকতে যেগুলো হয়েছে তা এখন আর নেই। সুন্দর একটি পরিবেশ বিরাজমান। বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি শক্ত ভিত্তির উপর অবস্থান করছে।

তিনি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের আন্দোলন মানেই হচ্ছে মানুষ খুন এবং জনগণকে হত্যা করা। তাদের আগুনে দগ্ধ মানুষগুলো এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা আগুন দিয়ে কুরআন শরীফ পুড়িয়েছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অত্যাচার নির্যাতন করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে। তাদের হাত থেকে শিশু, গর্ভবতী মা থেকে শুরু করে কেউ রক্ষা পায়নি। নির্বাচনে তারা যায়নি। এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। এর খেসারত কেন জনগণ দেবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে জনগণের জন্য কিছুই করেনি। মানুষ হত্যা, লুটপাট, মানি লন্ডারিং, এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে। এখন মামলায় হাজিরা না দিয়ে সময় নিচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের মানুষ এখন খেয়ে পরে ভাল আছে। এখন আর হাড্ডি চর্মসার দেহের মানুষ নেই। দারিদ্র্যতা দেখিয়ে এখন আর বিদেশ থেকে সাহায্য আনা হচ্ছে না। বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে।

তিনি বলেন, সরকার কৃষকের কল্যাণে কাজ করছে। মাত্র ১০ টাকায় প্রায় ১ কোটি কৃষককে কৃষি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সার, বীজসহ কৃষি উপকরণ দিতে কৃষি উপকরণ কার্ড দেয়া হয়েছে কৃষককে। অথচ সারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৮জন কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছে। ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। মাছ, ফল, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশে এখন অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো হয়েছে। হতদরিদ্রদের জন্য আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটি গৃহহীন মানুষকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়ার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশ যেতে ইচ্ছুকরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারছে। এখন আর কাউকে ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশ যেতে হয় না।

তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা যাবে বলে আশা করছি। স্কুল-কলেজে এখন অনলাইনে ভর্তি হতে পারছে। ১০টি ভাষা শিক্ষার জন্য একটি এ্যাপস তৈরি করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত এদেশে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করতেও বাধা দিয়েছে। ১৪০০ সাল পালনের জন্য কবি সুফিয়া কামালকে আহবায়ক করে একটি উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠান করার কথা থকলেও তৎকালীন বিএনপি সরকার তার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে আমরা সেদিন ট্রাকের উপরে মঞ্চ করে ১৪০০ সাল উদযাপন করেছি।
সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত