পাথরঘাটা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা!

প্রকাশ : ২২ মে ২০১৭, ১৮:২৬

সাহস ডেস্ক

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বরগুনার পাথরঘাটা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রবিবার (২১ মে) বিকেলে পাথরঘাটা উপজেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলাটি দায়েরের পর বিচারক মো. রেজওয়ানুজ্জামান মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। পাথরঘাটার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. মতিউর রহমানের ছেলে মো. মিজানুর রহমান মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামালায় আসামিরা হলেন— উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মান্নান হাওলাদার, তার ভাই আ. রাজ্জাক, বোন জামাতা হযরত আলীসহ চার-পাঁচজন খাকি পোশকধারী ও পাঁচ থেকে সাত জন অজ্ঞাত সাদা পোশাকধারী। 
মামলা পরিচালনাকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার কীর্ত্তনিয়া মিন্টু বলেন, ‘পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজওয়ানুজ্জামান মামলা আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তরের আদেশ দিয়েছেন।’
বাদী মিজানুর রহমান আবু মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ১৯৭১ সালে আসামিরা রাজাকার হিসেবে ট্রেনিং নিয়ে অস্ত্রসহ এলাকার নিরীহ শান্তিপ্রিয় লোকদের বাড়িতে হামলা করেন। তারা বিভিন্ন মানুষের গরু, মহিষ ও গচ্ছিত অর্থ-সম্পদ লুটপাট করেন। এর মাধ্যমে আসামিরা সম্পদের পাহাড় গড়েন এবং নামে-বেনামে জায়গা-জমি, দালান কোঠা তৈরি করে এখনও ভোগ-দখল করছেন। 

এছাড়া, আসামিদের বিরুদ্ধের ধর্ষণের অভিযোগও করা হয়েছে। পাশাপাশি আসামিরা পাকিস্তানি সেনাদের মনোরঞ্জনের জন্য স্থানীয় মেয়েদের জোর করে পাকিস্তানি ক্যাম্পগুলোতে নিয়ে যেতেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।
মামলার বিবরণীতে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৯ জুন মামলার ৪নং সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন অধিকারীকে রাজাকার জালালের বাড়ির সামনে ওয়াপদায় হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি চালানো হয়। তাকে হত্যা করতে না পেরে পরদিন ৩০ জুন তার আপন চাচা সুরেন্দ্র নাথ অধিকারীকে হত্যা করে লাশ গুম করেন আসামিরা। ১৮ আগস্ট বাদীর বাবা মতিয়ার রহমান ও ১নং সাক্ষী মনমথ রঞ্জন মিস্ত্রীর বাবা মনোহর মিস্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে মনোহরের বাড়ি অগ্নিসংযোগ করা হয়।

মামলার বাদী মিজানুর রহমান আবু বলেন, ‘দেরিতে হলেও আমার বাবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের জন্যই এ মামলা দায়ের করেছি। আশা করছি আদালত আমার বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন।’
বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব মো. আ. রশিদ বলেন, ‘পাথরঘাটায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময় মান্নান অনুপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। তার ভাইয়েরাও রাজাকার ছিল। মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন আমাকে জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাকে চাবুক মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।’ এ বিষয়ে মান্নানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তিনি কোনও জবাব দেননি বলে জানান জেলা কমান্ডার।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, ‘বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই কার্যক্রম চলছে। এ অবস্থায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে মামলা করেছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন খুলনার বগী ও বাগেরহাটের শরণখোলায় প্রশিক্ষণ নেই। পরে সেখান থেকে আমাকে ভারতে পাঠানো হয়।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত