‘আমার মা মারা যাওয়ার পরও এত কান্না আমি কাঁদিনি’

প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৭, ১৩:১০

সাহস ডেস্ক

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের ভাস্কর্য নিয়ে যে বিতর্ক সেটির শিল্পী ছিলেন মৃণাল হক। ২৬ মে (শুক্রবার) রাতে  ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনণ থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, যখন ভাস্কর্যটি সরানো হয়েছিল, তখন তিনি কান্না থামাতে পারেননি। যা এত বেশি ছিল যে, তার মায়ের মৃত্যুর পর তিনি এত কাঁদেননি।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শিল্পী মৃণাল হক এসব কথা বলেন।

সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষকে এই ভাস্কর্য তৈরির আইডিয়ার প্রসঙ্গ মৃণাল হক বলেন, কিভাবে সুপ্রিম কোর্টের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়, এটিকে খুব সুন্দর আদালত প্রাঙ্গন হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছিল। তখন কর্তৃপক্ষ এধরণেরই একটি প্রতীকী ভাস্কর্য তৈরির কথা বলেন, একটি মেয়ে, দাড়িপাল্লা ধরে দাঁড়িয়ে আছে, চোখ বাঁধা। হাতে তলোয়ার। সেটাই বানানো হয়েছে।

মৃণাল হক জানান, প্রথমে তিনি ভাস্কর্যের একটি মিনিয়েচার মডেল পেশ করেন। এটি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করার পর তিনি মূল ভাস্কর্য তৈরির কাজ শুরু করেন।

মৃণাল হক বলেন, এর আগে তার তৈরি লালন ভাস্কর্যটি নিয়েও সমস্যা হয়েছিল, যেটি বিমানবন্দরের সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তার ভাস্কর্য সম্পর্কে যেসব আপত্তি তোলা হয়েছে তার জবাবে মৃণাল হক বলেন, যারা আপত্তি করতে চায়, তারা একটা ছবি নিয়েও আপত্তি করে। একটা পাখির ছবি নিয়েও আপত্তি করে। অনেক কিছু নিয়েই আপত্তি করে। সারা পৃথিবীতে ভাস্কর্য হচ্ছে। সেখানে কেউ এসব নিয়ে কথা বলে না, আপত্তি করে না। বাংলাদেশে যেহেতু চারটি দেয়ালের মধ্যে আটকে রেখে মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষা দেয়া হয়, সেখানে যারা শিক্ষা গ্রহণ করে এবং যারা পড়ায়, তাদের সীমারেখাও ঐ ছোট্ট ঘরের মধ্যেই।

বাংলাদেশে একজন শিল্পীর সৃজনশীলতা এবং স্বাধীনতা বিষয়ে মৃণাল হক বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে, আমরা কি তাদের কাছে হার মানবো? আমাদের এই সরকার আছে বলেই আজকে দেশে ভাস্কর্য বানানো যাচ্ছে বা হচ্ছে।

প্রতিবাদের মুখে সরকারকে ভাস্কর্য সরিয়েও নিতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মৃণাল হক বলেন, এটা করতে হচ্ছে, কারণ অনেক প্লাস-মাইনাস, হিসেব-নিকেশের ব্যাপার আছে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে যখন ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি কান্না থামাতে পারেননি।

‘বৃহস্পতিবার রাতে আমাকে প্রথম কাঁদতে হয়েছে। আমার মা মারা যাওয়ার পরও এত কান্না আমি কাঁদিনি। আমার মনে হয়েছিল, আমাদের সবকিছু বোধহয় শেষ হওয়ার সূত্রপাত হলো।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত