আজ শ্রীপুর গণহত্যা দিবস

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৭, ১১:৫২

সাহস ডেস্ক

আজ ১৫ জুন, বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর শ্রীপুর গণহত্যা দিবস। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে শতাধিক মানুষ, অগ্নিসংযোগ করা হয় প্রায় প্রতিটি বাড়িটিতে। বিভীষিকাময় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সোনাপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন নোয়াখালী পৌরসভার সবুজের সমাহারে ঘেরা শ্রীপুর, সোনাপুর, মধ্য করিমপুর ও খ্রিস্টান পাড়ার পূর্ব অংশে।

সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবে অকালে ঝরে যায় শতাধিক প্রাণ। এ সময় তাদের পাশবিক লালসার শিকার হন কয়েক জন মা-বোন। গান পাউডার ছিটিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় সোনাপুর বাজারের দোকানপাটসহ পাশ্ববর্তী গ্রাম শ্রীপুর, সোনাপুর, মধ্য করিমপুর গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি। সেদিনের হত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াল স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও স্বজনহারা পরিবারগুলো।

মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন, শ্রীপুর গ্রামের অধিবাসী মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিএলএফ’র টিম লিডার ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার নোয়াখালী ফজলুল হক বাদল ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কামাল উদ্দিন জানায়, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি এ সব গ্রামের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে শ্রীপুর, সোনাপুর ও মধ্য করিমপুর গ্রামের বেশিরভাগ যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে।

এর আগে মুক্তিযোদ্ধারা জেলার সরকারি অস্ত্রাগার লুট করে। তাদের লুন্ঠিত অস্ত্র জেলার দক্ষিণাঞ্চলের এ এলাকায় মজুদ রাখে এবং এখান থেকে ট্রানজিট রুট হিসেবে সদর পূর্বাঞ্চলে অস্ত্রগুলি মুক্তিকামী যুবকদের হাতে পৌঁছানো হতো।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে এ সব তথ্য দিয়ে রাজাকাররা তাদের এনে এ জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এ এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়।

পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে এ এলাকার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। তাই যুদ্ধ শুরুর পর পরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের আক্রোশ ছিল জেলা শহরের নোয়াখালী রেল স্টেশন সংলগ্ন এ গ্রামগুলোর প্রতি।

৭১ এর ১৫ জুন গ্রামের মানুষ যখন দুপুরের খাওয়া খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে, ঠিক তখনই গুলির প্রকট শব্দে আঁতকে উঠে মানুষ। দিকবিদিক ছুটোছুটি করতে থাকে মানুষ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানাদারদের গুলিতে একের পর এক লাশ পড়তে থাকে।

এ ভাবে শ্রীপুরের প্রতিটি বাড়িতে হত্যা, গান পাউডার ছিটিয়ে বাড়িঘর আগুন দেওয়া, লুটতরাজ করা এমনকি কয়েক জন মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। সেদিন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জোসেফ শোয়ারিশও হানাদারদের গুলিতে শহীদ হয়।

এভাবেই হানাদাররা ১৫ জুন শ্রীপুর, সোনাপুর, মধ্য করিমপুর, ও খ্রিস্টান পাড়ায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড, বাড়িঘরে আগুন, লুটতরাজ, মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় শ্রীপুরে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত