কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০১৭, ১১:৩৫

সাহস ডেস্ক

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সরকারি জসিমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মুসলিম সরদার মিশু তার স্ত্রী কুলসুমা বেগমের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী কুলসুমার স্বজনদের অভিযোগ, মিশু ও তার পরিবারের লোকজন কুলসুমাকে দফায় দফায় নির্যাতন চালিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও কামড়ের চিহ্ন নিয়ে তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি।

এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে ১৭ জুন (শনিবার) রাত দেড়টায় মুসলিম সরদার মিশুকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

কুলসুমার (৪০) স্বজনরা জানায়, ১৬ জুন (শুক্রবার) সন্ধ্যায় প্রথমে কুলসুমার ওপর নির্যাতন চালানো হয় চাঁদপুর শহরের বিটি রোড়ের ভাড়া বাসায়। পরে অচেতন অবস্থায় সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে তার ওপর আরও কয়েকজন মিলে দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন চালায়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় কুলসুমাকে। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তারা আরও জানান,  ৮ বছর আগে কুলসুমার বিয়ে হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলার নলুয়া গ্রামের মুসলিম সরদার মিশুর সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় যৌতুক হিসেবে নগদ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি শুরু করে মিশু। পরে তাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আবারও টাকা চাইলে দিতে না পারায় শুরু হয় নির্যাতন।

ছয় মাস আগেও একবার শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এক সন্তানের মা কুলসুমার ওপর। ওই ঘটনার পর এক বছরের কন্যা সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন কুলসুমা। এর মধ্যেই প্রায় তিন মাস আগে চাঁদপুর সরকারি কলেজে কর্তব্যরত অবস্থায় তিন ছাত্রীকে নেশাযুক্ত দ্রব্য খাইয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তাকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সরকারি কলেজে পাঠানো হয়। 

চিকিৎসাধীন আইনজীবী কুলসুমা বলেন, লালমনিরহাট থেকে বদলি হয়ে আবার চাঁদপুর আসার জন্য আমার কাছে আবারও ৫ লাখ টাকা দাবি করে মিশু। কিন্তু আমি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। হঠাৎ ১৬  জুন (শুক্রবার) বিকালে আমাকে ফোন করে বলে, আমি লালমনিরহাটে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে আমার মেয়েকে একটু দেখতে চাই। তখন আমি তাকে বাসায় আসতে বলি। পরে সন্ধ্যায় ভাই আব্দুল হকসহ মিশু আমার বাসায় আসে। সে ঘরে ঢুকেই আমাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেরি।

নির্যাতিত কুলসুমা ও তার নিকটাত্মীয় চাঁদপুর সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সুমন বলেন, মিশু তার বাড়িতে নিয়ে তার ভাতিজা ও পরিবারের আরও কয়েকজন মিলে প্রায় এক ঘণ্টার মতো কুলসুমাকে মারধর করে। রুটি বানানোর বেলন দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে। পরনের বেল্ট দিয়েও বেদম আঘাত করে। সেই সঙ্গে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ের চিহ্নও রয়েছে। নির্যাতনের পর সেখানেও তিনি অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন। পরবর্তীতে বিটি রোড এলাকার লোকজনের কাছে খবর পেয়ে কুলসুমার ভাই আরিফসহ কয়েকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। 

এ ঘটনায় ১৭ জুন (শনিবার) রাত রাত ১টায় চাঁদপুর শহরের তালতলা এলাকা থেকে মিশুকে আটক করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেন কুলসুমার স্বজনরা। সেখানে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

কুলসুমার বড় ভাই হানিফ খন্দকার বলেন, কোনও মানুষ কোনও মানুষকে এভাবে নির্যাতন করতে পারে না দেখলে চিন্তাই করা যায় না। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। 

মামলা প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান কুলসুমার ভাই হানিফ। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত