‘মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথম এত লাশ দেখলাম’

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০১৭, ১১:৩৫

আসাদুজ্জামান সাজু

‘৭১ সালের কথা, সেই ছোট বেলায় যুদ্ধের শব্দ শুনেছি, ওই সময় এক সাথে অনেকগুলো লাশ দেখেছি। তখন মনে করতাম যুদ্ধ হলেই বুঝি অনেক লাশ এক সাথে দেখা যায়। কিন্তু ৪৬ বছর পর আবার আমার এলাকায় এত লাশ দেখে চোখে জল এসেছে।’ বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন সামসুল হোসেন।

লোক সমাগমে কানায় কানায় পুর্ণ চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ। সবার চোখে মুখে উৎকন্ঠা। স্বজন হারানোর বেদনায় কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে মাঠটি চারদিক।

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ১০টি মৃতদেহ নিয়ে ৩টি এম্বুলেন্স এসে ভিড়লো ইউপি মাঠে। এম্বুলেন্সগুলোর গেট না খুলতেই উৎসুক জনতা প্রিয়জনের মৃতদেহ খুঁজতে জানালায় উঁকি দিচ্ছেন।

একে একে ১০টি মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ইউএনও শাহীনুর আলম। নিহত ১০ জনেই এ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। তারা সবাই পোশাক ও কাঠ শ্রমিক।

এক সাথে দুই সন্তানের মৃতদেহ দেখে সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছেন সাদ্দাম হোসেন ও আলমগীর হোসেন মা জরিনা বেগম। কখনও জ্ঞান ফিরলেই চিৎকার মেরেই থেমে যাচ্ছেন। দুই ছেলের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন আইয়ুব আলী। ঈদে বাসের চাপ বাড়বে বলেই দুই নাতনীকে রমজানের শুরুতে নিজেই ঢাকা থেকে নিয়ে আসেন আইয়ূব আলী। এ আইয়ুব আলী শুধু দুই ছেলেকে নয় বড় ছেলে সাদ্দামের শ্যালক দেলোয়ার হোসেনও মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছে।

শনিবার সকাল ৬টায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কলাবাগান এলাকায় ট্রাক উল্টে তাদের পাশ্বের গ্রামের আরও ৭ জন মিলে ওই ইউনিয়নের মোট ১০ জনের মৃত্যু ঘটে। এ দুর্ঘটনায় আদিতমারী উপজেলার ২ জনসহ মোট ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

হস্তান্তর করা মৃতদেহগুলো হলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে আলমগীর (৩০) , ছোট ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৮), খাঙ্গার চওড়া গ্রামের মনোয়ারের ছেলে মনির হোসেন (২২), ঘোঙ্গাগাছ গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন (২৫), চাপারহাট গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মজনু মিয়া (২২), ঝন্টু মিয়ার মেয়ে সুবর্ণা আক্তার(৮), উত্তর বত্রিশ হাজারী গ্রামের আহমেদ আলীর ছেলে কোহিনুর ইসলাম (৪০), আশরাফুলের ছেলে সহিদুল ইসলাম (৩৫),শাহজামানের কলেজ পড়–য়া ছোট ছেলে মোহসিন আলী (১৯) ও বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন (২২)। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৮) ও একই এলাকার বড়াইবাড়ি গ্রামের আইয়ূব আলীর ছেলে আজিজুল ইসলাম (২২)।

মৃতদেহ হস্তান্তর শেষে কালীগঞ্জ ইউএনও শাহীনুর আলম জানান, রংপুর জেলা প্রশাসন নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতদের পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপুরণ ঘটনাস্থলেই প্রদান করেছে। এ ছাড়াও লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে আরও ক্ষতিপুরণ দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত