নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় শোলাকিয়া মাঠ প্রস্তুত

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০১৭, ১৩:৩২

সাহস ডেস্ক

গেল বছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদগাহের পাশে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। পুলিশ দাবি, বিষয়টি মাথায় রেখে এবার ঈদগাহ ও আশপাশের এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

পুলিশ জানিয়েছে, শোলাকিয়া মাঠে এবারের ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রথম জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদ। ১৮২৮ সালে শুরু হওয়া এই মাঠে এবার আয়োজন করা হয়েছে ১৯০তম ঈদের জামাত।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন খান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আট প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ২০ প্লাটুন এপিবিএনসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সমন্বয়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তাবলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। 

এসপি বলেন, ঈদের মাঠে প্রবেশপথ ও আশপাশের এলাকায় ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও আটটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকবে। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হবে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি।

আনোয়ার হোসেন খান বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে শুধু জায়নামাজ ছাড়া ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে মুসল্লিদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ঈদের মাঠের দক্ষিণ দিকে তিনটি, পূর্ব দিকে তিনটি ও উত্তর পাশে একটিসহ মোট সাতটি প্রবেশপথ দিয়ে মুসল্লিরা প্রবেশ করতে পারবেন। এর মধ্যে ছয়টি প্রবেশপথে আর্চওয়ে বসানো হবে। 

এসপি বলেন, মুসল্লিদের দেহ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করানো হবে। ঈদের দিন পর্যন্ত এলাকার কোনো বাসায় যাতে নতুন কোনো ভাড়াটে না ওঠে, সে বিষয়ে বাড়িওয়ালাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। অচেনা কোনো লোক এলাকায় ঘোরাফেরা করলে তা পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের জন্য জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, জনস্বাস্থ্যসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রমই এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রস্তুতি কার্যক্রম নজরদারিতে এরই মধ্যে দফায় দফায় মাঠ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌরসভার মেয়রসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। 

ঈদের মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকরণসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ পর্যায়ে। মুসল্লিদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্মাণ করেছে কয়েকটি নতুন রাস্তা ও একটি সেতু। সংস্কার করা হয়েছে অজুখানা ও টয়লেট। চলছে শহরের বিভিন্ন স্থানে শোভাবর্ধনের কাজও। প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল দল। 

দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঈদের দিন সকালে জামাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের নিয়ে একটি ট্রেন ময়মনসিংহ ও অপরটি ভৈরব থেকে ছেড়ে আসবে। 

শোলাকিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য
শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, ঈদের জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিট আগে একটি শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হবে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর ইংরেজি ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির ওপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশ নেন বলে মাঠের নাম রাখা হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। প্রায় সাত একর আয়তনের বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত