স্বীকৃতি পাননি মুক্তিযোদ্ধার

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০১৭, ১৮:৩৭

সাহস ডেস্ক

'আষাঢ় মাস গাংগে-বিলে ভরা পানি, আমার স্বামী দুহান বিছাইনের লাইগা বাউলাজরু বাজারে যায়, আহে হেই বেইন্নাকালে। প্রতি রাইতে হে হুওনের সময় আমারে কইতো জয়ন্তী দেশের অবস্থা ভালা না। হুনতাছি দেশে এইবার যুদ্ধ লাইগা যাব। দু'দিন আগেও হে আমারে এই কথা গুলাইন কইছে, বেবাগ দিনের লাহান হেদিনো হে বাজারো দোকান সাজাইছে। বিহাল বেলা, বাড়িত আছিল আমার এক কাকা শ্বশুর আর আমরা বেবাগ বউ-ঝি ঘরে বাতি জ্বালাইনের লাইগা যামু। এমুন সুমে চত্তুর মোড়া (চার পাশ) হুনি চিল্লাচিলি্ল আর গুলাগুলির শব্দ। কী শব্দরে বাপু, চত্তুর মোড়া দিয়া বেবাগ মানুষ যেমনে পারতাছে দৌড়াইতাছে। তহন কাকা শ্বশুর অন্যবাড়ির বেডাইনগর লগে পলাইয়া গেছে। এমুন সময় হুনি আমার জেওয়াস বাঁচাও, বাঁচাওগো, আমারে মাইরা ফালাইলো কইয়া সবাইরে ডাকতাছে। এমুন সময় আমার দরজাত লাথথি মাইরা ভাইঙ্গা চাইর-পাঁচজন পাক মিলিটারি আর কয়েকজন রাজাকার ঘরে ঢুইকা আমারে ধইরা খামছা-খামছি শুরু করল। 

চিক্কুরে বুক ফাইটা যাইতাছিল বাপু, কিন্তু কেউ আমার কথা হুনে না। আমি ওগো অত্যাচারে বেহুশ হইয়া পইড়া গেলাম। পরে আর আমার লগে কী হইছে আমি কইতে পারমুনা বাপু । হুশ হইয়া দেহি আমগো বাড়ির সব ধান, সরিষা, গহনাগাটি লুট কইরা বাড়ির ওপর আগুন দিছে মিলিটারিরা, মহিলাগো মানও মারছে। আমার স্বামী সব কিছু হুইনা আমারে কইল আমার সব শেষ জয়ন্তী, আমি যুদ্ধে যামু, এর প্রতিশোধ নিমু আমরা। হে এই কথা কইয়া আমার দেবররে দিয়া রাইতে আমারে বাপের বাড়ি ভবানীপুর পাঠাইয়া দিল। মাস শেষ হয় তার কোনো খোঁজ নাই , পরে হুনি পাক বাহিনীগর লগে ভালুকা ব্রিজের নিচে মুক্তিবাহিনীর এক বিরাট যুদ্ধ হয়, যুদ্ধে মুক্তিগর সঙ্গে আমার স্বামীও যুদ্ধ করতাছিল। যুদ্ধ চলুনের সময় তার মাথায় নাহি গুলি লাগছিল। যুদ্ধ শেষে আমার স্বামীরে আর কেউ খুঁইজা পায় নাই। কয়েক দিন পর আমার স্বামীর লাশ গাংগে ভাসতে দেইখা কয়েকজন মিলা লাশ মাডি দিয়া চাপা দিয়া রাখছে । আমি ১৪ বছরে বিধবা হইয়া গেলাম বাপু... '
 
শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলে শেষ করল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে শহীদ হওয়া নিতাইচন্দ্র দেবনাথের স্ত্রী এবং পাক বাহিনীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের জয়ন্তী বালা দেবী। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও বীরাঙ্গনা জয়ন্তী বালা যেমন পেলেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি তেমনি মিলল না বীরাঙ্গনার মর্যাদাটুকু।

সূত্র: সমকাল 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত