চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জিয়াউদ্দিন

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০১৭, ১০:২৯

বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার সাক্ষী এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ আর নেই। তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে পিরোজপুরের সর্বস্তরে মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ এর ভাগ্নে শাহানুর রহমান সামিম জানান, সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে চলে যান না ফেরার দেশে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর ধরে জিয়াউদ্দিন লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। প্রায়ই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন। সর্বশেষ ১ জুলাই অসুস্থ হওয়ার পর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

মেজর জিয়াউদ্দিনের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি পিরোজপুর জেলা সংসদের সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী এমএ মান্নান জানান, আমরা পিরোজপুরে একজন অভিভাবককে হারালাম। মহান মুক্তিযুদ্ধে উপকূলে ও দেশে তাঁর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

মেজর জিয়াউদ্দিনের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শম. রেজাউল করিম, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি পিরোজপুর, পিরোজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মঠবাড়িয়া প্রেস ক্লাব সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন অঞ্চলের সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন জিয়াউদ্দিন। মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বীরত্বের সঙ্গে সুন্দরবন অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত রাখার জন্য তাকে সুন্দরবনের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ বলা হয়। সুন্দরবন রক্ষার জন্য তিনি ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। কখনও জেলেদের নিয়ে, কখনও প্রশাসনের সহায়তায় ওই অঞ্চলে ডাকাত নির্মূলে তিনি ভূমিকা পালন করেন। ডাকাতরা কয়েকবার তাকে হত্যার চেষ্টা করে।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে তাতে যোগ দেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় নিবন্ধ লেখার জন্য শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে চাকরীচ্যুত করা হয়। তখন তাঁর পদবি ছিলো লেফটেন্যান্ট কর্নেল। 

১৯৮৯-৯১ সালে বিপুল ভোটে পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে নিজের ও অন্যান্যদের অংশগ্রহণ এবং যুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি ‘সুন্দরবন সমরে ও সুষমায়’ নামে একটি বই লিখেছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত