এভাবেই চলতে থাকবে নওগাঁর শিশু পল্লবের জীবন!

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৪১

মুরাদ চৌধুরী

তিন বছরের শিশু পল্লব চন্দ্র সরদারের রোগ আরোগ্য যোগ্য নয়। হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসার পর অবশেষে বাড়ি পাঠানোর সিন্ধান্ত নিয়েছেন সিভিল সার্জন।

গত ৬ আগস্ট নওগাঁ সিভিল সার্জনের উদ্যোগে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৯নং বেডে ভর্তি করা হয়। এর কয়েকদিন পর হাসপাতালের ৩ নম্বর কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। পল্লবের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগীতা চেয়েছে তার পরিবার।

পল্লব চন্দ্র জেলার বদলগাছী উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামে আদিবাসী সুরেশ সরদারের ছেলে। পেশায় তিনি বেসরকারি কোম্পানির ক্যাভার্ড চালক। পল্লব জন্মের পর থেকেই গায়ের চামড়া কুচকানো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীর চামড়া দাগ কাটা। এরপর যতোই দিন যায় গায়ের চামড়া শক্ত হয়ে অস্থিরতা বাড়তে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর গায়ের চামড়া পরিবর্তন হয়ে পাতলা ও প্রতিটি দাগ থেকে রস বের হয়। শরীর থেকে প্রচুর তাপ বের হওয়ায় ঠান্ডা পরিবেশে এবং মাঝে মধ্যে নলকুপের ঠান্ডা পানিতে গামছা ভিজিয়ে সমস্ত শরীর মুছে দিতে হয় ও ভেজা গামছা পেচিয়ে রাখতে হয়। বিভিন্ন ডাক্তার ও কবিরাজী চিকিৎসা দেওয়া হলেও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। 

নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. রওশন আরা খানম বলেন, পল্লবকে আমরা ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এরমধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রফেসর ডা. তুষার সিকদার এর সাথে আমরা আলোচনা করলাম। পল্লবকে দেখালাম। তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।

তিনি আরো বলেন, আমরা যে চিকিৎসা দিচ্ছি। ঢাকায় নেওয়া হলে সেখানেও একই চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রফেসর ডা. তুষার সিকদার। এজন্য আর ঢাকায় নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে তিনি নতুন কিছু ঔষধ যোগ করেছেন। পল্লব এখন অনেক ভাল আছে। আরো কয়েকদিন হাসপাতালে রাখার পর পল্লবকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সিভিল সার্জন বলেন, এটি একটি জন্মগত বা জেনেটিক্স সমস্যা। চামড়া বা স্কীনের সমস্যা। বর্তমানে যে ঔষধগুলো চলছে সমস্যা কিছুটা কমে যাবে এবং আবারও নতুন করে সমস্যা শুরু হবে। এভাবেই চলতে থাকবে। তবে একটু সাবধানে থাকতে হবে। চুলকানি ও অস্বস্থি বোধ হবে। তখন মলম ব্যবহার করতে হবে। কিভাবে গোসল ও কি তেল ব্যবহার করতে হবে সেভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পল্লবের মা প্রার্থনা রানী বলেন, অনেক আশা নিয়ে হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে আসছিলাম। ভাবলাম এতোদিনে হয়তো সুচিকিৎসার অভাবে ছেলের রোগ আরোগ্য হয়নি। এবার ডাক্তারা নিজেরাই আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসছে। ডাক্তারা যখন বললেন এ রোগ ভাল হবার না। তখন মনটা খারাপ হয়ে গেল।

দিন দিন ছেলে বড় হচ্ছে। তার লেখাপড়া শিখা দরকার। কিন্তু তার সাথে অন্য কেউ মিশতে চায় না। এছাড়া ছেলেও রোদ গরম সহ্য করতে পারে না। তার বাহিরে বা স্কুলে যাওয়াও সমস্যা। এখন নিজেকেই বন্ধুর মতো ছেলের সাথে মিশতে ও পড়াতে হবে। আমার ছেলের ভবিষ্যতের জন্য যদি সরকার কিছু একটা করে দিত তবে ভালো হতো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত