নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৩১
প্রতি ঘণ্টায় প্রায় এক সেন্টিমিটার করে বাড়ছে নদীর পানি। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নওগাঁর আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ২১৫ সেন্টিমিটার এবং ছোট যমুনা নদী নওগাঁ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে নওগাঁ সদর উপজেলার ইকরতারায় ছোট যমুনা নদীর বাঁধ প্রায় ১ শ ফিট ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে ফতেপুর, বোয়ালিয়া, তিলকপুর ও পাশের বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার ইউপির বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় জনসাধারণ ও বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণান্তর চেষ্টা করছেন বাঁধটি মেরামতের। পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর নামক স্থানে আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে কয়েকটি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
৯ উপজেলার প্রায় ৪০ ইউনিয়নের শতশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর ফ্লাড ওয়ালের আউটলেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে নওগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকায় এক থেকে দেড় ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। জেলার আক্রান্ত এলাকার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রায় ৫০ হাজার একর ফসলি জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। নওগাঁ সদর মান্দা, সাপাহার, পত্নীতলা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর, রাণীনগর, আত্রাইসহ জেলার বিভিন্ন বাঁধের ৫০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
পত্নীতলা উপজেলার পাটিচরা ইউপির কাশিপুর ও ছালিগ্রাম মধ্যবর্তিস্থান শিমুল তলী (বুড়িদহ বিলের সন্নিকটে) এলাকার প্রায় ৫শ ফিট বাঁধ ভেঙ্গে মল্লিকপুর, মোবারকপুর, বাগুড়িয়া, ছালিগ্রাম, সাঁওতাল পাড়া, কাশিপুর, রশোকানাই, পাটি আমলাই, হেলেঞ্চাডাঙ্গি, আমিনাবাদ, আমবাটি, গাহন, চকযগদ, পাহার কাটা, ধলাহার, বাঁশবাড়ি, পূর্ব পাটিচরা, পশ্চিম পাটিচরা, ডোহানগর, যদুবাটি, ফিচুকুড়ি, ইশবপুর, চক রাধা সহ ১৪ বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। নজিপুর ইউপির কাঞ্চন, রঘুনাথপুর, রামজীবনপুর, বানিল্লাসহ আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও দোচাই, চক দোচাই, বামনাবাজ, সুলতানপুর, ব্যাংডম গ্রামে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।
আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ২ নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৫০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে অসহায় পরিবারগুলো বিশ্ব বাঁধে, স্কুলে ও উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোন সরকারি সাহায্য বা ত্রাণ তাদের কাছে না পৌঁছায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর দু’টি স্থানে মূল বাঁধ এবং ১০টি স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এসব ভাঙ্গনের ফলে উপজেলার কুসুম্বা, নুরুল্যাবাদ, বিষ্ণপুর, কালিকাপুর, প্রসাদপুর, ভারশো, তেতুলিয়া, ভালাইন, মান্দা সদর ও কশব ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাড়িঘর এবং ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। আত্রাই নদীর ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলীতে, আত্রাই উপজেলার মালিপুকুর, পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর, বদলগাছীর এনায়েতপুর ও রাণীনগর উপজেলার ঘোষগ্রামে বাঁধ ভেঙ্গে ঘরবাড়ি ও ফসল প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া সাপাহার সীমান্তের পূর্নভবা নদীর তীর উপচে আসা পানিতে সাপাহারের পাতাড়ি ইউপির ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে ছোট যমুনা নদীর ফ্লাডওয়ালের আউটলেটগুলো দিয়ে শহরে পানি ঢুকে পড়েছে। এর ফলে শহরের ডিগ্রির মোড়, বিহারী কলোনী, উকিলপাড়া, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ সুপারের বাসভবন, পুরাতন কোর্ট এলাকা, জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, সুপারীপট্টি, কালিতলা, কেডির মোড়, বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ, পার নওগাঁর নিচু এলাকা এলাকায় এক থেকে দেড় ফুট পানির নীচে। উকিলপাড়া সড়ক, কাচাড়ী সড়ক, কেডি’র মোড় থেকে মুক্তির মোড় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর নিবার্হী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ২১৪ সেন্টিমিটার এবং ছোটযমুনা নদী নওগাঁ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান বলেছেন , জেলায় ২০টি আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ লাখ টাকা ও ১’শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ১ লাখ টাকা ও ১শ মেট্রিক টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।