গোমস্তাপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৫৭
ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পাশের নওগাঁ জেলা থেকে পূণর্ভবা নদী দিয়ে বয়ে আসা পানি গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের নিকট মহানন্দায় যুক্ত হয়ে প্লাবিত হয়েছে মহানন্দা ও পূনর্ভবার দু’কূল। এর সাথে জেলার ভোলাহাট উপজেলা দিয়ে ভারত থেকে আসা মহানন্দার পানি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।
জেলায় মহানন্দার পানি শনিবার দুপরে বিপদসীমার মাত্র ৫ সে.মি নীচে ২০.৯৫ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা ক্রমাগত বাড়ছে। শনিবার রহনপুরে পূণর্ভবার পানি বিপদসীমার ৪৫ সে.মি উপরে ২২.২৭ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে গোমস্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও বেশ কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ শহীদুল আলম জানান, জেলার নদীগুলির পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র ১৯ আগস্ট শনিবার পর্যন্ত পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও আরও ৩/৪ দিন পানি বৃদ্ধির আশংকা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাউবো মহানন্দা তীরবর্তী কয়েকস্থানে পানি প্রবেশ বন্ধ করেছে। গত বৃহস্পতিবার মহানন্দার পানির তোড়ে গোমস্তাপুর সদর ইউনিয়নের নয়াদিয়াড়ী চাঁদপুর ফেরিঘাট সংলগ্ন বিকলদহ মাঠের বন্যা প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেঙ্গে বন্যার পানি প্রবেশ করায় হাজারেরও বেশী হেক্টর জমির রোপা আমন ও আউশ ধান তলিয়ে গেছে। ওই স্থানে একটি সেতু মাটিতে দেবে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সেখানে গত শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয় সাংসদ গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ও সাবেক সাংসদ জিয়াউর রহমান সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলি পরিদর্শন ও ত্রান বিতরণ শুরু করেছেন। কিছু ভানভাসি মানুষ গোমস্তাপুর-ভোলাহাট সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। গোমস্তাপুরের ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে রহনপুর পৌর এলাকার কিছু অঞ্চলসহ ৭টি ইউনিয়নই কমবেশী বন্যার পানি কবলিত হয়ে পড়েছে। গোমস্তাপুরের কিছু সড়কেও পানি উঠেছে।
মহানন্দার পানি বৃদ্ধিতে গোমস্তাপুর ছাড়াও ভোলাহাটের পোলাডাঙ্গা, হলদীগাছি, সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চৈতন্যপুর, চাঁদপুর, গোবরাতলা, ধাইনগরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর সাথে বৃষ্টির পানি যুক্ত হয়ে অনেক স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল, বিল, ড্রেন ও স্লুইস গেট দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফসল ও জনপদ। এদিকে ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী না হওয়ায় সরকারিভাবে এখনও গোমস্তাপুরে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা যায়নি বলে গোমস্তাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মৌদুদ আলম খাঁন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শনিবার ৫ ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থদের একটি তালিকা তৈরী করে পাঠানো হয়েছে। রবিবার থেকে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব রায়হানকে নিয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছেন।
এদিকে, জেলায় পদ্মার পানি বাড়লেও এখনও বিপসসীমার ১১৭ সে.মি. নীচ দিয়ে ২১.৩৩ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। বরং মহানন্দার পানির চাপেই (ব্যাক প্রেশার) পদ্মার পানি চাঁপাইনবাবগঞ্জে সামান্য বেড়েছে বলে পাউবো জানিয়েছে। গত দু’দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফারাক্কা পয়েন্টে (শিবগঞ্জের পাংখা পয়েন্ট) পদ্মা ৯ সে.মি করে বাড়লেও মহানন্দার কারণে গোদাগাড়ি হয়ে রাহশাহীতে কিছুটা বেশী বেড়েছে বলে পাউবো সূত্র জানিয়েছে।