বন্যায় মধ্যাঞ্চলে অবনতি
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৫৮
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পদ্মা ও এর শাখা নদী বেষ্টিত মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তীব্র স্রোতে কারণে মাওয়া ও পাটুরিয়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনাতে পানি কমলেও এখনও তা বিপদসীমার ওপরেই রয়েছে। কুড়িগ্রামে ৩, গাইবান্ধায় ২ ও নওগাঁতে ২ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
১৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিকাল থেকে ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
১৮ আগস্ট (শুক্রবার) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাসে জানিয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি সমতলে হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতলে হ্রাস আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
কুড়িগ্রাম
পানি সামান্য কমলেও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে। ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সে.মি. এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৪৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় দুর্গম এলাকার অধিকাংশ বন্যার্তের ভাগ্যে তা জুটছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানিতে ডুবে উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের কাজল নবী (৫) ও সদর উপজেলার নাজিরা গ্রামের আল ওয়াকিল লাবিব (৭) নামে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়। জেলার নাগেশ্বরীতে পানিতে ডুবে ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত মোহনা খাতুন (২) উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের শালমারা গ্রামের মনছুর আলীর মেয়ে।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় করতোয়া ছাড়া সব নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) গোবিন্দগঞ্জের হাওয়াখানা ও চর বালুয়া এলাকায় করতোয়া নদীর বাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়। ফলে জেলার সাত উপজেলায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানিতে ডুবে দুইজন মারা গেছে। তারা হলেন, গোবিন্দগঞ্জের শিবশহর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে জিনাত হোসেন (৩) ও পলাশবাড়ীর কিশোরগাড়ী গ্রামের সাইদার রহমান সাইদের মেয়ে স্মৃতি আকতার (১৫)।
নওগাঁ
নওগাঁয় প্লাবিত এলাকা বেড়েই চলছে। ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) সকালে ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ভোর রাতে নওগাঁ সদর উপজেলার ইকরাতারা নামক স্থানে ছোট যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে ৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। দুইটি লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) সকালে রাণীনগর উপজেলার কনৌজ ঋষিপাড়া নামকস্থানে ছোট যুমনা নদীর তীরে গাছের সঙ্গে আটকে থাকা অবস্থায় অজিত চন্দ্র প্রাং (৫৩) নামের এক ব্যক্তি ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত অপরজন হলেন, মহাদেবপুর উপজেলার আলীদেওনা গ্রামের কোমর উদ্দীনের ছেলে আজিজার রহমান (৫০)।
জামালপুর
জামালপুর জেলায় বন্যার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) দুপুরে যমুনার পানি বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে ২২ সে.মি. হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগ কমেনি।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
শেরপুর
ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শেরপুর জেলায় বন্যার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। স্থানীয় দশআনী ও মৃগী নদীর পানিও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেরপুর সদরের ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নই বর্তমানে বন্যা কবলিত।
বগুড়া
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ২৩ সেন্টিমিটার কমে যাওয়ায় বগুড়ার তিন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে এসব উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি রয়েছে। খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গবাদি পশুর খাবার সংকট এখন চরমে ।
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে (শহর রক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্ট এলাকায়) ১০ সেন্টিমিটার কমলেও এখনো বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
নাটোর
নাটোরের নলডাঙ্গায় শতশত বিঘা আমন ধান তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। উপজেলার বারনই নদীর পানি গত ৭ দিনে ১৭৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
সদরপুর (ফরিদপুর)
সদরপুরে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ফলে গত ৫ দিনে নারিকেল বাড়িয়া ও চরনাছিরপুর ইউনিয়ন সম্পূর্ণ ও চরমানাইর, ঢেউখালী ও আকোটেরচর ইউনিয়নের আংশিক এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পাশাপাশি ব্যাপক এলাকাজুড়ে নদী ভাঙনও শুরু হয়েছে।
পাংশা (রাজবাড়ী)
পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর দুই ইউনিয়নের বেড়ি বাঁধের বাইরে ১৩টি গ্রামের পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
দোহার (ঢাকা)
পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দোহারে গত দুই দিনে ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
মুন্সীগঞ্জ
শিমুলিয়ায় পারাপারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে পণ্যবাহী প্রায় ২৫০টি ট্রাক। এছাড়া নানা ধরনের আরও ৫০টি যান এখন দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষারত। পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে ফেরির পন্টুন উপরে উঠাতে হচ্ছে। তাই শিমুলিয়া-কাঁঠলবাড়ি ফেরি সার্ভিস বিঘ্নিত হচ্ছে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
১৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিকাল থেকে ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) সকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হয়েছে। বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কৃষক বোরো ফসল, আউশ ক্ষেত হারিয়ে এখন রোপা আমন ক্ষেত নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারী বৃষ্টিতে নদী, হাওর, বিল ভরাট হয়ে নিম্নাঞ্চলের আমন ক্ষেত নিমজ্জিত হচ্ছে।
মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা)
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে টানা বর্ষণ ও ডাকাতিয়া নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন। প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।