দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৪১

সাহস ডেস্ক

পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সেতুর ৩৮ নম্বর পিলারের ওপরের ক্যাপের খাঁচা উঠে গেছে। রড ঝালাই করে লাগানো হচ্ছে। খুঁটিটির শেষ ধাপ এই পিলার ক্যাপের ঢালাই ১৩ সেপ্টেম্বর হওয়ার কথা রয়েছে। 

এদিকে ৩৭ নম্বরের পিলার ক্যাপের খাঁচা কুমারভোগের কনসট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে জাজিরায় নেয়ার কাজ শুক্রবার রাতে শুরু হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর খাঁচাটি ৩৭ নম্বর খুঁটিতে স্থাপন করা হবে। ৩৭ নম্বর ক্যাপটি অপেক্ষাকৃত বড়। এর পরে ১৫ সেপ্টেম্বর এর ঢালাই করার কথা রয়েছে। এই নিয়ে পদ্মায় এখন ভীষণ ব্যস্ততা। ৪ আগস্ট ৩৮ নম্বর পিলারের উপরের ক্যাপের খাঁচা লাগানো হয়। এর আগে রডের বিশাল ক্যাপের খাঁচা তৈরি করা হয় কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের পাশে ভাসমান জেডিতে। 

এই ক্যাপ ঢালাইয়ের ১৪ দিনের মাথায়ই সুপার স্ট্রাকচার (স্প্যান) স্থাপন উপযোগী হবে। তাই এখন পদ্মা সেতুর দৃশ্যমানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। সংশ্লিষ্টরা চাচ্ছেন সেপ্টেম্বরের মধ্যেই স্প্যান স্থাপন করতে। সেই লক্ষ্যে সব প্রচেষ্টাই চলছে এখন। এই নিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘন ঘন কাজের তদারকি করছেন। 

এদিকে হ্যামার সঙ্কটে দু সপ্তাহেরও বেশি সময় পাইল ড্রাইভ বন্ধ থাকার পর আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। ১৯ শ’ কিলোজুলের নতুন হ্যামার মাওয়া প্রান্তের ১৪ নম্বর পিলারে পাইল ড্রাইভ করছে। আর ২৪শ’ কিলোজুলের হ্যামারটি নিয়মিত মবিল পরিবর্তনসহ সংস্কার শেষে আবার কাজে নেমেছে। এটি পাইল ড্রাইভ করছে জাজিরা প্রান্তের ৪১ নম্বর পিলারে। পদ্মায় এখন প্রবল স্রোত। এরই মধ্যে সেতুর ভীত তৈরিসহ সব কাজই চলমান রয়েছে। 

এপর্যন্ত পদ্মা মূল সেতুর নদীতে ৭৯টি পাইল ড্রাইভ হয়েছে। আর তীরের ৪২ নম্বরে আর ১৬টি পাইল স্থাপন হয়েছে। সব মিলিয়ে পাইল বসেছে ৮৫টি। এছাড়া জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ১৬৬টি পাইল বসেছে। আর সদ্য শুরু হওয়া মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর পাইল বসেছে একটি। আরও একটি পাইল স্থাপনের কাজ চলছে। মাওয়া প্রান্তে ১৭২টি পাইল বসবে। অপর প্রান্ত জাজিরায় এই সংযোগ সেতুর ১৯৩ টি পাইলের মধ্যে ১৬৬টি পাইল বসেগেছে। দু’পাড়ের সংযোগ সেতুর পাইল ৩৬৫টি। 

এখন চারিদিকে কমর্যজ্ঞ। এসব কর্মযঞ্জে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। সবমিলিয়ে শরতে পদ্মা ও পদ্মা তীরে এখন বিশেষ পরিবেশ বিরাজ করছে। আর তাই অনেক কৌতুহলী আসছেন বাঙালির এই বীরত্বের সেতুর নির্মাণ শৈলী দেখতে। দেশী বিদেশী কর্মীদের অবিরাম শ্রমে ক্রমেই স্বপ্নের সেতুটি দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে এখন। 

আগামী ১৪, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ সভা। এই সভায় দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞরা সরেজমিন সভা করবেন এবং সেতুর কাজের খুটিনাটি পর্যবেক্ষণ করবেন। পরে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন। তাই গুরুত্বপূর্ণ সভাটি ঘিরে নানারকম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। 
এদিকে নানা চ্যালেজ্ঞে পদ্মা সেতুর বাকী ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন অনুমোদনের কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। বৃটিশ ‘কাউই’ নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এই ডিজাইনের কাজটি এগিয়ে এনছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুমোদদিত ডিজাইনটি পেশ করার কথা রয়েছে। 

এদিকে ঈদেও পদ্মা সেতুর কাজ অন্যান্য ঈদের মতই চলমান ছিল। তবে যেসব প্রকৌশলী, কর্মকতা ও শ্রমিকরা ঈদ ছুটিতে ছিলেন, তাদের অধিকাংশই কাজে যোগদান করেছে। তাই পুরোদমেই ঈদের পরে আবার সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। 

এদিকে আসন্ন শুস্ক মৌসুমকে ঘিরে কিছুটা পিছিয়ে পড়া পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ মাওয়া প্রান্তে পুরোদমে শুরুর প্রস্তুতি চলছে। জাজিরা প্রান্তে ও মাঝেরচর এলাকায় নদী শাসনের নানা কাজ চলমান রয়েছে বলে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। 

পদ্মা সেতুর ১০তম স্প্যান মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের খালাস হয়েছে। চীন থেকে সমুদ্র পথে আসা এটি নিয়ে ১০টি স্প্যান পৌছেছে। এর মধ্যে ৭টি স্প্যানের ফিটিং সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর জন্য মোট ৪১টি স্প্যান প্রয়োজন হবে। চীনে এপর্যন্ত ২০টি স্প্যান তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। তৈরি হওয়া বাকী আরও ১০টি স্প্যান পর্যায়ক্রমে মাওয়া আনার কাজ চলছে। এছাড়া নতুন করে আরও ৮টি স্প্যান তৈরির কাজ এখন চীনে চলমান রয়েছে। এরপরই বাকী আরও ১৩টি স্প্যানের কাজ শুরু হবে। তবেই পূর্ণ হবে ৪১ স্প্যান। প্রতিটি স্প্যানের গড় ওজন প্রায় ৩ হাজার টন। ফিটিংয়ের পর এক একটি করে এই স্প্যান নিয়ে বসিয়ে দেয়া হবে পিয়ারের (খুঁটির) ওপর।

আর ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু বিশাল স্প্যান কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে খুটি পর্যন্ত বহন করে নিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৬ শ’ টন ওজন ধারণের ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন। এই ক্রেনটিই পাজা করে ধরে দিয়ে যাবে স্প্যান। ইতোমধ্যে এই স্প্যান বহনের মহড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা শুধু বাস্তবে এই স্প্যান বাসানো। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত