মিয়ানমারের ওপর

কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে নিরাপত্তা পরিষদ?

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:৩০

সাহস ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার শিকার লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক জরুরী আলোচনা হবে।

এই বৈঠকের একদিন আগেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেছেন, জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বলতে যা বোঝায়-রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাদের আক্রমণে ঠিক তাই ঘটছে।

তবে নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতাধারী স্থায়ী সদস্যদের অন্যতম চীন ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছে যে তারা মিয়ানমারের সরকারের তাদের ভাষায় ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার’ পদক্ষেপকে পুরোপুরি সমর্থন করে।

এমন অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের ওপর কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পারবে?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. আলী রিয়াজ মনে করেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টি যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উঠছে, এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

যে পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে পাঠ্যবইয়ে ‘জাতিগত নিধনের’ উদাহরণ হয়ে উঠছে এই ঘটনা। এর মানবিক দিকের পাশাপাশি কূটনৈতিক দিকও আছে। আর বিরল ঘটনা হলো জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছে নিরাপত্তা পরিষদকে আলোচনায় বসতে। শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিকীকরণ হলো। এর আগেও আলোচনা হয়েছে তবে এই আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম।

কিন্তু ভেটো ক্ষমতাধারী স্থায়ী সদস্য চীন যখন মিয়ানমারের সরকারকে স্পষ্টভাবেই সমর্থন দিয়েছে, ফলে এখানে কি আসলে কোন প্রস্তাব পাস করানো যাবে?

ড. আলী রিয়াজ বলেন, ‘এমন সম্ভাবনা কম। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসেও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে আলোচনা উঠেছিল, চীন ও রাশিয়া ভেটো প্রয়োগ করেছিল। চীনের আজকের অবস্থানও স্পষ্ট। কিন্তু জাতিসংঘে কোনো প্রস্তাব পাশ না হলেও আলোচনাটা গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট হচ্ছে এ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের এককভাবে যতটুকু করার তারা করছে বটে, এ অবস্থায় গোটা আন্তর্জাতিক সমাজের একটা ভূমিকা আছে এবং সেই ভূমিকার স্বীকৃতি আজকের বৈঠকটা।’

তাহলে নিরাপত্তা পরিষদে যদি কোন নিন্দা প্রস্তাব পাস না-ই হয়, তাহলেও কি বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলো অন্য কোনভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে?

আলী রিয়াজের মতে, ‘পারবে, যদি তারা উৎসাহী হয় পারবে। বিভিন্ন রকম কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া যেতেই পারে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ওপর নির্ভর করতে হবে তা নয়। সাধারণ পরিষদের বৈঠক হতে যাচ্ছে। বেশিরভাগ সদস্য যদি নিন্দা প্রস্তাব দেয় তাহলে একটা চাপ তৈরি হবে।এছাড়া আসিয়ান এক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। বিভিন্নভাবে চাপ তৈরি করা যেতে পারে-অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক চাপ হতে পারে।’

আলী রিয়াজ মনে করছেন বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্বল কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাদের উদ্যোগ আমার দুর্বল মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ যে মানবিক ভূমিকা নিয়েছে সেটা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হলেও নিউইয়র্কে কেন বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি নেই?

সেখানে তারা উপস্থিত থাকলেও সেটা স্পষ্টভাবে কেন বলা হচ্ছে না -আমরা, বাংলাদেশ সেখানে উপস্থিত হয়েছি, এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় আর নেই-এটা বাংলাদেশকেই বলতে হবে। আর কেউ বলবে না। অন্য দেশের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করা, তাদের মধ্য থেকে চাপটা আরো বেশি তৈরি করা-এই উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশের আরো বেশি দৃশ্যমান কূটনৈতিক উদ্যোগ দরকার। এখনও সময় আছে, অব্যাহতভাবে এটি করতে হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত