‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে’

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:২৮

অনলাইন ডেস্ক

‘মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য জাতীয়ভাবে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সমস্যা : বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা একথা বলেছেন।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুজন নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার।

গোলটেবিল বৈঠকে মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি হাফিজ উদ্দিন খান, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফয়েজ আহমদ, নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বাহাউদ্দিন চৌধুরী, গবেষক ড. সি আর আবরার এবং সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বক্তব্য দেন।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় গণহত্যার সব শর্ত পূরণ হচ্ছে মন্তব্য করে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জেনোসাইডের (গণহত্যার) ১০টি শর্ত রয়েছে। রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় যার প্রতিটি পূরণ হচ্ছে। এটা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে চলমান হত্যাযজ্ঞ।’

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের বিভিন্ন ঘটনার কারণে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি অন্যদিকে সরে যেতে পারে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রায় ১০ লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের চাপ সহ্য করা দুরূহ হবে। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যু ভয়াবহ নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এ বিরাট উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ করে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।’

লিখিত বক্তব্যে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন নেত্রী অং সান সুচি বলেছিলেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। কেন তারা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু তাঁর এ ভাষণের পরও এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসেছে বাংলাদেশে। পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বেশ আগে। বক্তব্যের সারবত্তা থাকলে অন্তত তিনি দেশত্যাগ দ্রুত বন্ধ করে একটি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হতেন।’

আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে যে সহিংসতা ও সন্ত্রাস চালাচ্ছ তা ভিন্ন মাত্রার। গণমাধ্যমের কারণে আজ এ ঘটনা সকলেই অবগত। এ ঘটনা হিটলারের নাৎসী বাহিনীকেও হার মানিয়েছে। মিয়ানমার পূবপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন চিন্তা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

হামিদা হোসেন বলেন, ‘আমাদের উচিৎ কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনটি নিয়ে কাজ শুরু করা। তিনি বলেন, সরকারকে বেসরকারি সংগঠন, সাধারণ জনগণ সকলকে নিয়ে এ সংকট সমাধানে কাজ করতে হবে। আর তা না হলে এ সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।’

মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘এ সংকটের ২টি দিক রয়েছে, একটি দিক হলো এতো লোক আশ্রয়হীন হয়ে আমাদের দেশে এসে পড়েছে, তাদের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। অপর দিকটি হলো এসকল মানুষকে তাদের দেশে ফেরৎ পাঠাতে হবে। একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে, যা অকল্পনীয় ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এ ব্যর্থতা সমগ্র বিশ্বের।’

সমগ্র জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সংকটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে ড. সি আর আবরার বলেন, কিভাবে যে রোহিঙ্গারা দিনাতিপাত করছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে অবশ্যই ফেরত পাঠাতে হবে এবং এ জন্য আমাদের চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।