রাজনৈতিক দলের কার্যালয় কমিটির খোঁজে নামছে ইসি

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৪১

সাহস ডেস্ক

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নির্বাচিত কমিটি-অফিস, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসরণে নির্বাচন, ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব, পেশাজীবী-সহযোগী সংগঠনের সম্পৃক্ততা এবং তৃণমূলের মতামতে প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন।

নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী এসব বিষয় বাস্তবায়নে কতটা অগ্রগতি হয়েছে তা জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৪০টি নিবন্ধিত দলকে বুধবার (১ নভেম্বর) চিঠি দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

দলগুলোকে ১৫ দিনের মধ্যে এসব তথ্য ইসিতে জানাতে বলা হয়েছে। শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়েও চিঠিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।  

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, শর্তপূরণ করেই দলগুলো নিবন্ধিত হয়েছিল। আরও বেশ কিছু বিষয় প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে তাদের। এজন্য আমরা সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়ে নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দিয়েছি। দলগুলোর জবাব পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।  

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর নির্বাচিত কমিটি ও মাঠ অফিসের কার্যক্রমের তথ্য যাচাইয়ে একটি ‘বিশেষ দল’ তদন্তে নামবে। শর্ত পূরণ না হয়ে থাকলে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট দলকে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস দেওয়া হবে।

২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালুর পর এ পর্যন্ত মোট ৪২টি দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়। আর ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদলত অবৈধ ঘোষণা করে।

ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে- নিবন্ধিত দলগুলো বিধি-বিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দায় নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শর্ত পালনে দলগুলোর অগ্রগতি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে সব নিবন্ধিত দল একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

ইসির যুগ্মসচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা) মো. আবুল কাসেমের স্বাক্ষরে রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ সম্পাদক/ মহাসচিবের বরাবরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত শর্তে দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর কোনো বিধান লঙ্ঘন হলে দলের নিবন্ধন বাতিল বলে গণ্য হবে।

নিবন্ধন ও শর্ত প্রতিপালন শর্তাদি : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়। 
শর্তগুলো হলো : 
১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনে যদি দলটির অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন।
২. যে কোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পান। 
৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/ মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনসংবলিত দলিল থাকে। নতুন কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে হলে শেষ শর্তটিই পূরণ করতে হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আরপিও অনুযায়ী এ শর্ত পূরণের পর দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসরণে সুনির্দিষ্টি কয়েকটি বিধান নিবন্ধন বিধিমালায় রাখা হয়েছে, যা দলগুলোর নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ৯০বি (১)(বি)-তে বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয়সহ সব স্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে। ২০২০ সালের মধ্যে সব কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। ছাত্র-শিক্ষকসহ পেশাজীবী কোনো সহযোগী সংগঠন রাখায় নিষেধাজ্ঞা; ওয়ার্ড-থানা-উপজেলা ও জেলা কমিটির মতামত নিয়ে কেন্দ্রীয় বোর্ড সংসদে প্রার্থী বাছাই করবে।

নিবন্ধন বাতিলের হুমকিতে ইসলামী দলগুলো : নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দলে ৩৩ ভাগ নারী প্রতিনিধি রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসলামী দলগুলো। এ ছাড়া ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারলে দলগুলো নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। তাদের তথ্যমতে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নারী প্রতিনিধিত্ব দিন দিন বাড়লেও পিছিয়ে আছে ইসলামী দলগুলো। অনেক ইসলামী দলে ১ ভাগও নারী নেই। নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে এমন দলও আছে যাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। শর্ত পূরণে তাদের হাতে সময় আছে মাত্র সাড়ে তিন বছর।
সাহস২৪.কম/ আল মনসুর 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত