ঝালকাঠি চাচৈর রণাঙ্গনে নির্মিত হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:১৫

রাজু খান

ঝালকাঠির সদর উপজেলার চাচৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সাব-ক্যাম্প। নলছিটি উপজেলা কমান্ডার মোঃ সেকান্দার মিয়ার নেতৃত্বে ২৮ জন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের এ চাচৈর সাব-ক্যাম্পে পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করবে বলে ১২ নভেম্বর রাতে খবর পাওয়া যায়। সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরকে জানালে তিনি ১২০ জন মুক্তিযোদ্ধা, সদর উপজেলা কমান্ডার সুলতান হোসেন মাস্টার ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আমাদের সাথে ১৩ নভেম্বর সকালে যোগ হয়। ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর আমাদের রণকৌশল জানিয়ে দেয়। পাকহানাদার বাহিনী ধীরে ধীরে আমাদের ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাবার জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেই আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা)।

সকাল ১০টায় এক প্লাটুন পাকহানাদার বাহিনী ঢুকে পড়ে চাচৈর গ্রামে। আমরা উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ৩ দিক থেকে পাকহানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ শুরু করি। দক্ষিণ দিক খোলা পেয়ে সেদিকে পিছু হটতে থাকে। ইতোমধ্যে অনেক রাজাকার ও পাক হানাদার সদস্য নিহত হয়। একই এলাকার খান বাড়ির ভিতরে চতুর্দিক থেকে ঘর ঘিরে থাকায় মাঝখানের আঙিনায় ঢুকে রাজাকার ও হানাদার বাহিনী আশ্রয় নেয়। তাদের অনেকের শরীরে গুলি লেগে আহত হয়েছে। খালি রাখা দক্ষিণ দিকের শন বনে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধারা গোপনে হামলা করার প্রস্তুতি নেয়। বাকি ৩ দিক থেকে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্কিত করতে থাকি। তারাও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। এসময় শহীদ হয় কাঠিপাড়ার আঃ আউয়াল, খান বাড়ির বাসিন্দা আদু খান, হামেদ আলী, সেকান্দার মাঝি, আলেয়া ও তার ছোট ভাই শহীদ হন।

দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেলে হানাদার বাহিনী দক্ষিণ দিক খোলা দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা সুযোগ বুঝে ব্রাশ ফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই ১৮ জন পাকহানাদার নিহত হয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে যুদ্ধ। এ সম্মুখ যুদ্ধে রাজাকার ও পাকহানাদার কমান্ডারসহ প্রায় ৬০ জন নিহত এবং যুক্তিযোদ্ধাসহ ৬ জন বাঙ্গালী শহীদ হন।

আলোচিত এই যুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয় ঘটে পাক বাহিনীর। বিজয়ী হন মুক্তিযোদ্ধারা। সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান এভাবেই পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধের বর্ণনা দেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ১৯৯১ সালে একবার স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও তা ওই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর ঝালকাঠি সদর উপজেলার চাচৈর রণাঙ্গনে ক্যাপটেন শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকহানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল শহীদ, এবং এলাকার বাসিন্দা আদু খান, হামেদ আলী, সেকান্দার মাঝি, আলেয়া ও তার ছোট ভাই শহীদ হন এবং পাকহানাদার ও রাজাকারসহ ৬০ জন শহীদ হন। সম্মুখ যুদ্ধস্থানে স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ, সহায়তা পায়নি কোন শহীদ পরিবার।

মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিন জানান, আমরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যেখানে আমাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে সেখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ তো দূরের কথা কোন পরিকল্পনাও সরকার গ্রহণ করেনি।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ঝালকাঠি জেলার ডেপুটি কমান্ডার দুলাল সাহা বলেন, চাচৈর রণাঙ্গনে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব ঝালকাঠি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ হতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার কোন ফলাফল এখনও দেখতে পাচ্ছি না।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত