৪৬ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি বধ্যভূমি, গণকবরসহ স্মৃতি বিজড়িত ৭ স্থান

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৩৬

রহিম রেজা

১৯৭১ সনের ২৩ নভেম্বর বরিশাল বিভাগের ৯নং সেক্টরের মধ্যে ঝালকাঠির রাজাপুর থানা সর্বপ্রথম পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত হয়। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাতভর যুদ্ধের পরে হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। শত্রু মুক্ত হয় রাজাপুর থানা, বন্ধ হয় গণহত্যা।

রাজাপুর থানা মুক্ত হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে উপজেলার আঙ্গারিয়া গ্রামের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ও বাবুল হোসেন পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধে শহীদ হন। ১৯৭১ সনের ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর আন্তানায় আক্রমন চালায়, শুরু হয় গুলি পাল্টা গুলি। ২৩ নভেম্বর ভোর রাত ৪টার দিকে পাকহানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। এ দিনের যুদ্ধে শহীদ হন আবদুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক এবং গুরুতর আহত হন মোঃ হোসেন আলীসহ কমপক্ষে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা। সে দিনের এ যুদ্ধে ৩’শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ৯নং সেক্টরের অন্যতম সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মুঃ শাহজাহান ওমর। এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন মুঃ শাহজাহান ওমরের পায়ের গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ হন। মুক্তিযুদ্ধে তার এ বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য শাহজাহান ওমর বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।

৯নং সেক্টরের মধ্যে সর্বপ্রথম রাজাপুর থানা শত্রু মুক্ত হওয়ায় ১৯৯৫ সালে রাজাপুরে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মিলন কেন্দ্র। এছাড়া শহীদের স্মরণে তাদের নামানুসারে রাজাপুরে কয়েকটি সড়কের নামকরণ করা হয়। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৬ বছর অতিবাহিত হলেও রাজাপুর উপজেলায় যুদ্ধকালিন স্মৃতি বিজড়িত ২টি বধ্যভূমি ও ৩টি গণকবরসহ ৭টি স্থান আজও অবহেলিত ও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। উদ্যোগের অভাবে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে এসব স্থানগুলো।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার থানা ঘাটের বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় প্রায় ৭’শ থেকে ৮’শ নীরিহ মানুষকে হত্যা করা হয়। সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) এর বাড়ির সামনের বধ্যভূমিতে আরো প্রায় ২’শ লোককে হত্যা করা হয়। এছাড়াও শুক্তাগড় ইউনিয়নের কাঠিপাড়ায় ২০১০ সালেু দুইটি গণকবর পাওয়া যায়। যার একটি থেকে অনেক মানুষের হাড্ডি উদ্ধার হয় এবং সাতুরিয়ার তারাবুনিয়া গ্রামে একটি (অখননকৃত) গণকবরের সন্ধান দেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। কাঠিপাড়ার শহীদ পরিবারগুলো আজ স্বীকৃতি পায়নি।

উপজেলার প্রবেশ মুখে বাঘড়ী বাজারের খাল সংলগ্ন থানা ঘাটের সর্ববৃহৎ বধ্যভূমিটি ২০০৯ সালে তৎকালীন ইউএনও মোঃ জসীম উদ্দিনের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় একটি স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শুরু হয় মাত্র দুই টন টি.আর এর অর্থ ও ব্যক্তিগত সাহায্যের অনুদানে। পরে সামান্য কাজ করেই অর্থের অভাবে বন্ধ গেলেও বর্তমান ইউএনও আফরোজা বেগম পারুল উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে কাজ শুরু করলেও তা সম্পন্ন হয়নি।

উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ শত মুক্তিযোদ্ধার দাবি অচিরেই যেনো কালের স্বাক্ষী বধ্যভূমি ও গণকবরের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত