৪ ডিসেম্বর দামুড়হুদা মুক্ত দিবস

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:২১

শামসুজ্জোহা পলাশ

৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা মুক্ত দিবস। মহান মুক্তি যুদ্ধের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির অবসান ঘটে আজকের এই দিনে। দামুড়হুদা ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এ দিন দামুড়হুদার মুক্তিকামী মানুষ উল্লাসিত হয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়।

দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার আছির উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার ডাক দেওয়ার পর পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ২৯নং বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা চুয়াডাঙ্গা হয়ে দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা, নাটুদা ও দর্শনায় ব্যারাক নির্মাণ করে। এসব স্থান থেকে তারা নিরীহ বাঙালিদের ওপর চালায় নির্যাতন। নিরীহ মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করে।

১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট নাটুদাহ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধ ও পাকবাহিনীর সাতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ৮ বীর। সকাল ৭টায় মদনা গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘক্ষণ গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযোদ্ধা আ. মান্নান পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। মাঠে কর্মরত ৪ জন কৃষককে মুক্তিবাহিনী মনে করে রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই সাথে গ্রামের কয়েকশ ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় পাকবাহিনী। আটক মুক্তিযোদ্ধা মান্নানকে কার্পাসডাঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে এসে নির্মমভাবে হত্যা করে। হেমায়েতপুর গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে মারা যায় ৩ শত্রু সেনা। 

৮নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী ও সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার খন্দকার তানজির আহম্মেদ জানান, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা উপজেলার বাড়াদি গ্রামে মুক্তিযুদ্ধা ও মিত্র বাহিনী ক্যাম্পে ৪১ পার্বত্য রেজিমেন্ট গোরখা ব্রিগেডিয়ার কমান্ডার মিচিগান নির্দেশ দেন উপজেলাসহ দর্শনাকে শত্রু মুক্ত করত হবে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা এক প্লাটুন মিত্রবাহিনী ও ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা লোকনাথপুর তালবাগান সড়কের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

তারা গলায় দাড়ি ঘাটের নিকট দিয়ে রাবারের নৌকো যোগে ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে মাথাভাঙ্গা নদী পার হয়ে সড়কে এসে রাত ১২টায় এমবুস নিয়ে থাকে। এসময় পাক হানাদার বাহিনীর একটি এম্বুলেন্স নিয়ে চুয়াডাঙ্গা উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে তালাবগানের নিকট পৌঁছালে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী গোলাবর্ষণে আগুন ধরে পুড়ে যায় ওদের এম্বুলেন্স। এতে ৫ জন পাক সেনা নিহত হয়। ওই রাতে দর্শনাকে শত্রু মুক্ত করতে প্রাণ দিতে হয় দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানির ৪ শ্রমিক ও দর্শনা সরকারি কলেজের ১ অধ্যক্ষ, ২ অধ্যাপককে।

পরে পারকৃষ্ণপুর ঘাট পার হয়ে মিত্র বাহিনী দর্শনার দিকে আসতে থাকে। অপর দিকে উথলী প্রান্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামাদ ও আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী দল দর্শনার দিকে আসতে থাকে। এভাবে ৩ দিক থেকে দর্শনায় অবস্থানকারী পাক বাহিনীর উপর ত্রিমুখি আক্রমন চালিয়ে ৪ ডিসেম্বর ভোর ৬টা ৩০ মিনিটের সময় দামুড়হুদা উপজেলা শত্রু মুক্ত হয়।

৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের অভিযানে মিত্র বাহিনী নেতৃত্ব দেন কর্নেল বুফে। পরে পাক বাহিনী বাধ্য হয়ে উপজেলা থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে রেল সড়ক ধরে পালিয়ে যায়।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত