আজ মিরপুর, দৌলতপুর মুক্ত দিবস

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:২৮

সাহস ডেস্ক

আজ ৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার মিরপুর ও দৌলতপুর থানা পাকহানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে বহু ত্যাগের বিনিময়ে জেলার মিরপুর থানা পাকহানাদারমুক্ত হয়েছিল। এ দিনটি মিরপুর থানা পাকহানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়। 

১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে শতাধিক মুক্তিকামী ছাত্রজনতা বর্তমান মাহামুদা চৌধুরী কলেজ রোড পোস্টঅফিস সংলগ্ন মসজিদে শপথ গ্রহণ করেন। ৩০ মার্চ শেষ রাতে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর জিলা স্কুলে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু হলে পাকবাহিনী নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে যশোর সেনানিবাসের সাহায্য চায়। কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাহায্য না পাঠানোর সংকেত দিলে হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে তিনটি গাড়িতে করে গুলিবর্ষণ করতে করতে যশোর সেনানিবাসের দিকে পালিয়ে যায়। এ সময় পাক সৈন্যরা দুটি গাড়ি ঝিনাইদহ জেলার গাড়াগঞ্জের কাছে রাস্তায় কেটে তৈরি মুক্তিবাহিনীর ফাঁদে পড়ে যায় এবং ওই এলাকার ক্ষিপ্ত মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়। পাকবাহিনীর অপর ছয়জন সদস্য ভোরে জিলা স্কুল থেকে মিরপুরের দিকে পালিয়ে আসতে থাকে। প্রথম তারা মশান বাজার সংলগ্ন মাঠের মধ্যে তীব্র প্রতিরোধের মধ্যে পড়ে কিন্তু পাক সৈন্যদের গুলিতে মশানের ডা. আব্দুর রশিদ হিলম্যান, গোলাপ শেখ, আশরাফ আলী ও সোনাউল্লাহ শহীদ হন। 

মিরপুর থানার কামারপাড়ায় বিছিন্ন তিন পাকহানাদারের সঙ্গে স্থানীয় মুক্তিকামীদের আবারও যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মিরপুর থানার সিপাহী মহিউদ্দিন শহীদ হন। অপর পক্ষে পাকবাহিনীর ওই তিন সদস্যও নিহত হয়। 

উল্লেখ্য, শহীদ সিপাহী মহিউদ্দিনের কবরের পাশে মিরপুর উপজেলার শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর ভোরেই ৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১শ ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এর পর ৬৫ জন পাকহানাদার বাহিনীর দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পন করে। মিরপুর হানাদার মুক্ত হওয়ার সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিভিন্ন বয়সের হাজারও নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে।

একই দিনে দৌলতপুর হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে দৌলতপুরকে শত্রু মুক্ত করে থানা চত্বরে বিজয় পতাকা উড়ানোর মধ্য দিয়ে মুক্তিকামী বীর সূর্য সন্তানেরা দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত করেন। দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের সম্মুখ যুদ্ধসহ ছোট-বড় ১৬টি যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। যুদ্ধে ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ শহীদ হন। সবচেয়ে বড় যুদ্ধ সংঘঠিত হয় উপজেলার ধর্মদহ ব্যাংগাড়ী মাঠে। এ যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩শ পাকসেনা নিহত হয়। শহীদ হন তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তিনজন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সদস্য। ৮ ডিসেম্বর সকালে আল্লারদর্গায় পাক সেনারা দৌলতপুর ত্যাগ করার সময় তাদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা রফিক শহীদ হয়। এরপর দৌলতপুর হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেজর নুরুন্নবী।  

সাহস২৪.কম/মশিউর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত