আজ দিনাজপুর ট্রাজেডি দিবস

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১২:১৪

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে দিনাজপুরে এক বেদনাবিধুর মাইন বিস্ফোরণ ট্র্যাজেডি দিবস আজ ৬ জানুয়ারি। 

১৯৭২ সালের এদিনে (৬ জানুয়ারি) দিনাজপুর শহরের মহারাজা স্কুল ট্রানজিট ক্যাম্পে এক মাইন বিস্ফোরণে শহীদ হন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ছিনিয়ে আনা ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। 

পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের পর দিনাজপুর শহরের উত্তর বালুবাড়ীর মহারাজা হাইস্কুলে স্থাপন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা ট্রানজিট ক্যাম্প। বিজয় অর্জনের পর ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ক্যাম্পে সমবেত হন দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ আশপাশের জেলাগুলোর মুক্তিযোদ্ধা, যারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হামজাপুর, তরঙ্গপুর, পতিরাম ও বাঙালবাড়ী ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এখানে সমবেত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৮ শতাধিক। 

বীরমুক্তিযোদ্ধা সফিকুল ইসলাম জানান, রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্ত্র, শক্তিশালী বোমা, পুতে রাখা মাইনমুক্ত করতে সমবেত মুক্তিযোদ্ধারা নিয়োজিত করেছিলেন নিজেদের। ক্যাম্প থেকে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বেরিয়ে যেতেন পুতে রাখা মাইন ও ফেলে বা লুকিয়ে রাখা অস্ত্র ও গোলাবারুদের সন্ধানে। সন্ধ্যায় উদ্ধারকৃত মাইন ও অন্যান্য অস্ত্রাদি জমা করা হত মহারাজা স্কুলের দক্ষিনাংশে খনন করা বাংকারে।

কিন্তু ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এ রুটিন ওয়ার্কের এক পর্যায়ে ঘটে যায় মাইন বিস্ফোরণ দুর্ঘটনা। শহীদ হন ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। 

উদ্ধারকৃত অস্ত্র ব্যাংকারে নামানোর সময় এক অসতর্ক মুহূর্তে একজন মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে একটি মাইন পড়ে যায়। ফলে মাইনটি বিস্ফোরিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে পুরো ব্যাংকারের অস্ত্রভাণ্ডার বিকট বিস্ফোরণে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়।

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় সঠিক কতজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন তা জানা যায়নি। তবে সকালের রোলকলে উপস্থিত ছিলেন ৭শ ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা। দুর্ঘটনার আগে আনুমানিক ৫০/৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছুটি নিয়ে ক্যাম্প ত্যাগ করেছিলেন। দুর্ঘটনায় প্রায় ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ মুক্তিযোদ্ধার তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে। এদের অনেকের হাত-পা, মাথা অনেক দূরে ছিটকে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই শতাধিক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে ভর্তি করা হয়েছিল দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সেন্ট ভিসেন্ট মিশন হাসপাতালে। এদের মধ্যে থেকে পরবর্তীতে ২৯ জন মৃত্যুবরণ করেন। দুর্ঘটনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫ শতাধিক। 

তিনি আরও জানান, শুধু মুক্তিযোদ্ধাই নয়, এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় উত্তর বালুবাড়ী কুমার পাড়া এলাকার আরো ১৫ জন অমুক্তিযোদ্ধাও মৃত্যুবরণ করেন। ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় মহারাজা স্কুলের দ্বিতল ভবনসহ আশেপাশের অধিকাংশ ঘর-বাড়ি ও দালান-কোঠা। 

দুর্ঘটনার পর দিন ৭ জানুয়ারি দিনাজপুর গোরা শহীদ ময়দানে শহীদদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সামরিক মর্যাদায় ১২৫ জন শহীদের লাশ দাফন করা হয় পুণ্যভূমি ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে। এরপরে চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে আরও দাফন করা হয় হাসপাতালের মৃত্যু বরণ করা ২৯ জনের লাশ। নিহতদের মধ্যে সে সময়ে ৫৮ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে পাওয়া যায় আরো ৬৪ জন শহীদের নাম ও পরিচয়। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত