লালমনিরহাটে সংস্কার অভাবে ফের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:০২

আসাদুজ্জামান সাজু

তিস্তা ও ধরলা নদীর বন্যার ভয়াবহতা থেকে লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলাকে রক্ষা করতে বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এ বছরের বন্যায় অধিকাংশ বাঁধ ও সড়ক ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে বাঁধ ও সড়কগুলো। দ্রুত সংস্কার না হলে আগামী বন্যায় জেলায় আরো বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী লোকজন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর বন্যা থেকে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলাকে রক্ষা করতে তিস্তা ব্যারাজ থেকে ভাটিকে প্রায় ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ওই বাঁধ বিভিন্ন স্থানে এ বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একই সাথে জেলার কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও জেলা সদর রক্ষা করতে ২০০৩ সালে তিস্তার বাম তীরে ২৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও দুইটি সলেডি স্প্যার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকালীন ৭০ ফুট প্রস্থ জমি অধিগ্রহণ করে ১৪ ফুট প্রস্থ টপ ও ৭-১০ ফুট উচু এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যার মধ্যে সলেডি স্প্যার-২ থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার কাজ না করেই সমাপ্ত করা হয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই বাঁধ কেটে নিয়ে আবারো ফসলি জমি, পুকুর ডোবাসহ বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন জমির মালিকরা। ফলে ৭০ ফুটের এ বাঁধ এখন কোথাও কোথাও ৪-৫ ফুটে পরিণত হয়েছে। গত বন্যায় বেশ কিছু অংশে প্রবাহিত হয় পানি। কোনো কোনো স্থানে স্থানীয়রা জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ রক্ষা করেছেন মাত্র। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে তা সংস্কারের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এছাড়া হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ থেকে ওই উপজেলার সির্ন্দুনা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কিছু অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো এ বছরের বন্যায় ভেঙ্গে গেলেও তা এখন পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি।

তিস্তা সড়ক সেতু থেকে কালীগঞ্জের কাকিনা রেলগেট পর্যন্ত বাঁধের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের রজবপাড়া, কুটিরপাড়, চন্ডিমারী এবং সদর উপজেলার কালমাটি আনন্দ বাজার, বাগডোরা অংশকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

অপর দিকে বিগত ভয়াবহ বন্যায় সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর নিচে ফাটল দেখা দেওয়ায় তা সংস্কার করা হচ্ছে। নিম্নমানের বালু আর পাথর দিয়ে করা এ কাজের মান নিয়েও স্থানীয়দের রয়েছে নানা অভিযোগ।

এ দিকে ধরলার ডান তীর রক্ষায় সাড়ে ১৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যার মধ্যে গত বন্যায় ৩৫টি স্থানে এক দশমিক তিন কিলোমিটার পুর্ণাঙ্গ এবং প্রায় ৫ কিলোমিটার আংশিক ভেঙে যায়। এ বাঁধ সংস্কারের জন্য ৩৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প পাঠিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরকারি তথ্য মতে, গত বন্যায় জেলায় প্রায় আটশ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার এসব বাঁধ আগাম সংস্কার না হলে আগামী বন্যায় দ্বিগুণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সুশীল সমাজ ও নদী পাড়ের মানুষজন।

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে সহকারী কমিশনার সুজাউদ্দৌলা জানান, বন্যায় জেলার ব্যাপক রাস্তা ও অস্থায়ী বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেগুলো মেরামত প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। 

লালমনিরহাট এলজিইডি’র নিবার্হী প্রকৌশলী এস এম জাকিরুল রহমান জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলো মেরামতের জন্য চেষ্টা করছি। 

হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও বাঁধগুলো মেরামত করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন চেষ্টা করছেন। আশা করছি, আগামী বন্যার আগেই ক্ষতিগ্রস্থ সকল সড়ক ও বাঁধ মেরামত করা হবে। 

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ধরলা ডান তীর সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিস্তা বাম তীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি বেদখল হওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে। তা উদ্ধার করতে দখলকারীদের নামে দুইটি করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা জমি ছেড়ে না দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ