সুন্দরগঞ্জে আশ্রয়হীন হচ্ছে বেড়িবাঁধে থাকা দুই সহস্রাধিক পরিবার

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৫

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর বাঁধে আশ্রয় নেওয়া দুই সহস্রাধিক পরিবার আবারও আশ্রয়হীন হচ্ছেন। বসবাসের শেষ জায়গাটুকু হারিয়ে চন্ডিপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ী গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার ঘর বাড়ি সরিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। থাকার ব্যবস্থা না করেই তাদেরকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি থেকে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, প্রকৌশল, চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়ন ও চন্ডিপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ী গ্রামে তিস্তা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। সেই সেতুটির সংযোগ সড়ক দিয়ে একটি রাস্তা শ্রীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর বাজার হয়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট বাজারে গিয়ে পৌঁছাবে। এতে করে কুড়িগ্রামসহ আশেপাশের জেলাগুলোর মানুষ স্বল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। 

সেই সেতুর সাথে আরেকটি সংযোগ সড়ক উজান বোচাগাড়ী-বেলকা-সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ বাঁধটি হবে। তাই এই বাঁধটি মেরামত করে ২৪ ফুট প্রস্থের একটি রাস্তা তৈরি করা হবে। সেজন্য রাস্তাটি প্রশস্ত করতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। বাঁধটিতে চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ী, বেলকা ও দহবন্দ ইউনিয়নের দুই সহস্রাদিক পরিবার বসবাস করে আসছিলেন। 

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে উজান বোচাগাড়ী গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধের পাশে ঘরগুলোর দরজা-জানালা, বেড়া, ঘরের চালা খোলা হচ্ছে। যার যা কিছু আছে সেসব মালামাল ভ্যানে করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গাছপালা-বাঁশঝাড় কাটা হচ্ছে। এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে বাঁধের পাশেই জমি থেকে মাটি তুলে বাঁধ প্রশস্ত করার কাজ চলছে। 

বাঁধে আশ্রয়ে থাকা মানুষ জানান, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে বসতভিটা বিলীন হয়ে গেলে উজান বোচাগাড়ী-বেলকা-সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ বাঁধটির দুইপাশে পরিবার নিয়ে তারা আশ্রয় নেন। এখন এ জায়গাটুকুও হারাতে হচ্ছে তাদের।

চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, নদীগর্ভে বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয়হীন মানুষগুলো বাঁধের নিচে জমিতে ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন সেখানে থেকেও তাদেরকে সরে যেতে হচ্ছে। এই মানুষগুলোর মধ্যে অনেকে অন্যের বাড়ি, আত্মীয়ের বাড়ি, বাঁশঝাড়ে ও রাস্তার পাশে পতিত জমিতে আশ্রয় নিচ্ছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল মুনসুর বলেন, উজান বোচাগাড়ী গ্রাম থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার বাঁধটি ২৪ ফিট প্রশস্ত করা হবে। এখন মাটি কাটার কাজ চলছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের চরে আশ্রয়ন প্রকল্প করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদনের পর ঘর প্রস্তুত হলে যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে সেখানে থাকতে দেওয়া হবে। কেননা অনেকেরই চরেও ঘর রয়েছে। যারা বাস্তুহীন, যাদের জায়গা নাই তাদেরকে সেখানে থাকতে দেওয়া হবে।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল মুঠোফোনে বলেন, আমরা যেখানেই সরকারি জায়গা পাচ্ছি সেখানেই গুচ্ছ গ্রাম করছি। আমরা সরকারি জায়গা পেলে অবশ্যই গুচ্ছগ্রাম করবো। এ ছাড়াও তাদেরকে আরও বিকল্প কিভাবে সহযোগিতা করা যায় আমরা তা দেখবো।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত