আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে থাকতে চাই: প্রধানমন্ত্রী (ভিডিও)

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৫১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিল তখন পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে বিজাতিয় ভাষা উর্দূ  আমাদের উপর চপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং কেবল মাত্র উর্দূকে রাষ্ট্র ভাষা হিবেসে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তমদ্দুন মজলিশ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠন এর প্রতিবাদ করে। সকলকে নিয়ে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। এ ধারাবাহিকতায় ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬৯ গণঅভ্যুত্থান, ৬ দফা এবং ৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল।

আজ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘একুশে পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসও বিকৃতি করা হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে যে মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিল তা হারাতে বসেছিলাম। কারণ ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যা করা হয়। অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যেন নিজেদের ভাষা ও ঐতিহ্যকে ভুলে না যাই। তবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তারপরও নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি ঠিক রেখে এগিয়ে যাওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমিও প্রতিবছর বাংলায় ভাষণ দেই। এখন বিশ্বের অনেক দেশ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। এছাড়া বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণ করতে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি। তবে বিএনপি-জামায়াত সরকার সেটা বন্ধ করে দেয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের গৌরব সংরক্ষণ করতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য। এসব গৌরব ও সংস্কৃতি আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত না। আমরা সব সময় বঙ্গবন্ধু আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। যে বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্রে জর্জরিত ছিল তা থেকে আমরা অনেকটা মুক্ত পেয়েছি। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে থাকতে চাই। সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। বাংলা নববর্ষ পালনের স্বীকৃতি কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। এর জন্য আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের কিছু পেত্মাতা এদেশের এখনও রয়ে গেছে। যার কারণে আমাদের ভাষা, উন্নয়নের প্রতি আঘাত আসে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের কেউ অবহেলা করতে পারে না। নিজেদের প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্বে একটা মর্যাদা পাচ্ছি। আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও কলাকূশলীদের খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসা এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া। যারা আমাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারে।’

এর আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের হাতে পদক তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবার যারা একুশে পদক পেয়েছেন তারা হলেন- ভাষা আন্দোলনে প্রয়াত আ জ ম তকীয়ুল্লাহ (মরণোত্তর) ও অধ্যাপক মির্জা মাজহারুল ইসলাম। সমাজসেবায় নিরাপদ সড়কের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অভিনয়ে হুমায়ূন ফরীদি (মরণোত্তর)। সঙ্গীতে শেখ সাদী খান, সুজেয় শ্যাম, ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, মো. খুরশীদ আলম ও মতিউল হক খান, নৃত্যে মীনু হক, নাটকে নিখিল সেন, চারুকলায় কালিদাস কর্মকার এবং আলোকচিত্রে গোলাম মুস্তাফা।

এ ছাড়া সাংবাদিকতায় রণেশ মৈত্র, গবেষণায় প্রয়াত ভাষাসৈনিক অধ্যাপক জুলেখা হক (মরণোত্তর), অর্থনীতিতে মইনুল ইসলাম, ভাষা ও সাহিত্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম খান (কবি হায়াৎ সাইফ), সুব্রত বড়ুয়া, রবিউল হুসাইন ও মরহুম খালেকদাদ চৌধুরী।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার হচ্ছে একুশে পদক। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট সংশোধিত ‘জাতীয় পুরস্কার/পদক সংক্রান্ত নির্দেশাবলী’তে স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের অর্থ বৃদ্ধি করে।

আগে ১৮ ক্যারেট মানের পঞ্চাশ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্রের সঙ্গে এক লাখ টাকা দেওয়া হত। অর্থ বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত