আজ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৮২তম জন্মবার্ষিকী

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:০৭

সাহস ডেস্ক

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৮২তম জন্মবার্ষিকী আজ সোমবার। দিবসটি পালন উপলক্ষে নূর মোহাম্মদ নগরে স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, র‌্যালি, গার্ড অব অর্নার প্রদান, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান, জেলা প্রশাসক ও নূর মোহাম্মদ ট্রাস্টের সভাপতি মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী।

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক শেখ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার (মহিখোলা) বর্তমান নূর মোহাম্মদ নগরে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র পিতা মোঃ আমানত শেখ ও মাতা মোসাঃ জেন্নাতা খানমের আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশের মুখ উজ্জল করবে। কিন্তু ডানপিটে নূর মোহাম্মদ লেখাপড়ায় বেশিদূর এগোতে পারেননি। স্থানীয় বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় তার শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটে। 

এরপর ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ নূর মোহাম্মদ তৎকালীন ইষ্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর সেক্টরে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭০ সালের ১ জুলাই যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে বদলি হয়ে আসেন। 

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ ৮ নং সেক্টরে সাবেক ইপিআর ও বাঙ্গালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানীতে যোগদান করেন। ৭১ এর ৫ সেপ্টেম্বর নূর মোহাম্মদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামের সম্মুখ যুদ্ধে একটি টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেলেন। সঙ্গী ছিল আরও ৪ জন সৈন্য। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর নজর রাখছিলেন। পাকবাহিনী টের পেয়ে বিপদজনক অবস্থার মুখে টহলদারী মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। হানাদারদের এ পরিকল্পনা বুঝে উঠতেই নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। মারাত্মক আহত হলেন সঙ্গী নান্নু মিয়া। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হানাদারদের মর্টার শেল মারাত্মকভাবে জখম করে নূর মোহাম্মাদকে। মৃত্যু আসন্ন বুঝে তিনি সিপাহী মোস্তফা কামালের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। উপায়োন্তর না পেয়ে তারাও তাই করলেন, কিন্তু একটি এসএলআর রেখে যান মারাত্বক আহত কমান্ডারের কাছে। নূর মোহাম্মাদ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও এসএলআর নিয়ে শেষবারের মত ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের উপর সেখানেই তিনি শহীদ হন। পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোঁপের মধ্যে এ বীরের মৃতদেহ পাওয়া যায়। 

ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ সঙ্গী সৈনিকদের প্রতি যে ভালবাসা প্রদর্শন করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত বুঝে দেশের জন্য আবারও হানাদারদের খতমের জন্য একা ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার পথ সুগম করার চেষ্টা চালিয়ে দেশপ্রেমের যে প্রমাণ রেখেছেন তার কোন তুলনা নেই। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এদেশের মাটিতে নূর মোহাম্মাদের রক্তের গন্ধ পাওয়া যাবে। যতদিন এ জাতি থাকবে ততদিন নূর মোহাম্মাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত