নারায়ণগঞ্জে সাত খুন: রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০১৮, ১৬:৫৩

সাহস ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের চার বছর পূর্ণ হয়েছে আজ শুক্রবার। নিহতের সাতটি পরিবারের মধ্যে ৫টি পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে এখন অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এই মামলায় নূর হোসেন, র‍্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ অন্য ঘাতকদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, সাত খুনের মামলায় গত বছরের ২২ আগস্ট উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের কপি এখনো পাওয়া যায়নি। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা এবং এখানে ১৫ জন আসামির ফাঁসির আদেশ হয়েছে; এ কারণে রায়টি প্রস্তুত করতে সময় লাগছে। যেহেতু আসামিরা এখনো রায়ের কপি পাননি; এ কারণে তারা আপিল করতে পারেননি।

সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী মধ্যপাড়া এলাকার সাত খুনের ঘটনায় নিহত মনিরুজ্জামানের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী সামসুন নাহারের বাড়িতে গিয়ে স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর দুই মাস পর আমার কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। স্বামীকে হারিয়ে এখন নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। অসহায় জীবন যাপন করছি। আমি চাই, নূর হোসেনসহ ঘাতকদের বিরুদ্ধে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টেও যাতে বহাল থাকে। আমরা চাই, এই সরকারের আমলেই ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।


নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, নিম্ন ও উচ্চ আদালতে যে রায় দিয়েছে এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ মামলার রায়টি এখন সুপ্রীমকোর্টে আছে। আমরা আশা করছি সুপ্রীমকোর্টও উচ্চ আদালতের রায় বহাল রাখবেন। আমরা এ রায়টি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাই। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সাত খুনের ঘটনায় সাতটি পরিবার তাদের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়েছে। সাতটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরাও আওয়ামী লীগের সন্তান। এ সাতটি পরিবারে যাদের চাকরির বয়স হয়েছে তাদের চাকরির সুযোগ করে দেয়ার আবেদন জানাচ্ছি। এ রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে আতঙ্কের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। খুনিরা জেলে আছে কিন্তু তাদের সব কিছুই চলছে। এ বিচারের মাধ্যমে তাদের অপশক্তি ধ্বংস হয়ে যাক।

নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, আমরা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে আছি কবে রায় কার্যকর হবে সেটা দেখতে। এ নির্মম নির্যাতনের বিচার এ দেশেই হবে? প্রধানমন্ত্রীর সেই মনমানসিকতা আছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। এ মামলায় যে কয়জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানাই।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আলোচিত মামলার রায়ে র্যাব-১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তা, সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পরে উচ্চ আদালত ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট নূর হোসেন, র‍্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল এবং ১১ জনের যাবজ্জীবন ও নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা বহাল রাখেন।

সাহস২৪.কম/রনি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত