সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে এক মাসে নিহত ৮

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৮, ১৮:৫০

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় চলছে বজ্রপাত আতঙ্ক। আকাশ মেঘলা হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ চমকালেই যে যার মতো নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। ঝড়, বৃষ্টি আর মেঘের বজ্রগর্জনে কেউ বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। গত একমাসে বজ্রপাতে জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্ততঃ ৮ জন।

এরমধ্যে গতকাল শুক্রবার প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন। এ নিয়ে বিগত একমাসে জেলায় নিহত হয়েছে ৮ জন। সারাদেশে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরায়। জেলার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ বজ্রপাত মাথায় নিয়ে মাঠে কাজ করছেন।

শুক্রবার দুপুরে আশাশুনি উপজেলার ফকরাবাদ গ্রামে বজ্রপাতে এক গৃহবধূ প্রাণ হারিয়েছেন। গৃহবধূর নাম ষষ্ঠী কুণ্ডু (৩৫)। তিনি আশাশুনি উপজেলার ফকরাবাদ গ্রামের শ্যামল কুণ্ডুর স্ত্রী। এদিকে শুক্রবার দুপুরে সদরের সাতানী গ্রামে আব্দুর রাজ্জাক (৫০) নামে এক ব্যক্তি বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন।

১০ মে শ্যামনগরে দুই যুবক, সদরে এক শিশু এবং আশাশুনির একজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, শ্যামনগরের কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঘোলা গ্রামের মৃত মাজেদ সরদারের ছেলে আশরাফ সরদার (৩৩) ও পার্শ্ববর্তী গাংআটি গ্রামের আব্দুস সাত্তার গাজীর ছেলে আমিনুর রহমান (৩০)। ১০ মে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নে কাশিমাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

একই দিনে সাতক্ষীরা সদর কুচপুকুর বজ্রপাতে এক শিশু নিহত হয়। নিহত শিশু সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের আমের আলী সরদারের ছেলে সাইদুল্লহ সরদার (১২)। ছাদের উপরে পানি সরানোর কাজ করা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। একই দিন জেলার আশাশুনিতে একজন মারা যায়।

২৮ এপ্রিল কালিগঞ্জ উপজেলা রতনপুর ইউনিয়নের সুবর্ণগাছি গ্রামে বজ্রপাতে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি সুবর্ণগাছি গ্রামের আক্তার হোসেনের স্ত্রী শাহিনুর বেগম (৩৩)। মাঠে ধান কাটার সময় বজ্র্রপাতে তার মৃত্যু হয়।

১৮ এপ্রিল কলারোয়ার চন্দনপুর ইউনিয়নে বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বজ্রপাতে নিহত হয়।

১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে তারা উপজেলার ভায়ড়া গ্রামে সাজ্জাত বিশ্বাস (৫০) নামের এক ব্যক্তি বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল বারি বিশ্বাসের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে।

এছাড়া ২০১৫ সালের ১০ জুন শ্যামনগর উপজেলায় বজ্রপাতে একই দিনে চারজন নিহত হয়। গত ১০ বছরের সাতক্ষীরা জেলায় বজ্রপাতে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এদিকে চলতি বছরের ১১ মে পর্যন্ত সারা দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ১৮১৮ জনের। 
আবহাওয়া অফিসের এক হিসাবে দেখা যায়, গত আট বছরে (২০১০ থেকে ২০১৭) পর্যন্ত বজ্র্রপাতে যত মৃত্যু হয়েছে তার ৩৩ শতাংশই হয়েছে মে মাসে। বজ্রপাতে বাকি ৬৭ শতাংশ মৃত্যু এই আট বছরের অন্য এগারো মাসে। ২০১০ সাল থেকে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৯ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। যে সংখ্যা ৯৯৬ জন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গত ৫ বছরে সারা দেশে ৫ হাজার ৭৭২টি বজ্রপাত হয়। এরমধ্যে ২০১১ সালে ৯৭৮, ২০১২ সালে ১ হাজার ২১০, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৪১৫, ২০১৪ সালে ৯৫১ ও ২০১৫ সালে ১ হাজার ২১৮ বজ্রাঘাত হেনেছে বাংলাদেশে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্যোগ ফোরামের গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত রিপোর্টে দেখা যায়, শুধু গত এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখের মধ্যেই সারা দেশে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা নারী-পুরুষ ও শিশু মিলে ৪৮ জন। এর মধ্যে শিশু ১৪, নারী ৩ ও পুরুষ ৩১ জন।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ, দিনাজপুর ও ব্রাক্ষ্মবাড়িয়ায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে শীতের আগ পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রচুর জলীয় বাষ্প ঊর্ধ্বমুখী হয়ে মেঘের ভেতরে যায়। জলীয় বাষ্পের কারণে মেঘের ভেতরে থাকা জলকণা ও বরফ কণার ঘর্ষণের ফলে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। সাধারণত মাটি থেকে আকাশের ৪ মাইল সীমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই বজ্রপাতের ছোবলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা যায় যে কোনো প্রাণী।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত