সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরলেন ৬৬ নারী শ্রমিক

প্রকাশ : ২০ মে ২০১৮, ১৫:২৫

সাহস ডেস্ক

ভাগ্য ফেরাতে সৌদি আরবে যাওয়া নারীদের ভাগ্যই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার (১৯ মে) রাত ৯টায় ফেরত আসা আরও ৬৬ নারী শ্রমিক দেশে ফিরে তারা এই বিরুপ মন্তব্য করেন।

এদের মধ্যে লাবনী (ছদ্মনাম)নামের একজন বলেন, দুই বছর আগে কাজের সন্ধানে সৌদি যাই। সেখানে গিয়ে আমাকে বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। যে বাড়িতে আমি ছিলাম সেখানে ১০টি রুম ঝাড়ু দিতে হতো। তারা ঠিকমতো খাবার দিতো না। মালিক আমারে অত্যাচার করতো। চাকরি ছাড়তে চাইলেও আমারে আরও বেশি মাইর দিতো।

লাবনী আরও জানান, দুই বছর আগে রিয়াদ যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর তাকে প্রথমে ১৫ দিন একটি কারাগারের মতো জায়গায় রাখা হয়। এরপর তাকে ৭৭ কিলোমিটার দূরে আল খারজ শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। বেতন বলা ছিল এক হাজার রিয়াল। ৪ মাস সেখানে কাজ করেন তিনি। এই সময় তাকে পরিবারের সঙ্গে কোনও কথা বলতে দেওয়া হয়নি।

লাবনীর মতো প্রায় প্রতিদিনই নারী শ্রমিকরা দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা।

এক নিরাপত্তা কর্মী জানান, তারা দেশে ফিরে এসেই কান্নাকাটি করেন। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে খাবার কিংবা আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের বাড়ি ফেরার  ব্যবস্থা করেন। অনেকের শরীরে জখমের চিহ্নও দেখেছেন তারা।

ফেরত আসা আরেক নারী নাসিমা খাতুন বলেন,  দুই মাস আগে আমি সৌদি গেছিলাম। যাওয়ার পর আমারে ১৫ দিন আটকায় রাখছে। এক দালালের মাধ্যমে ১০ হাজার ট্যাকা দিয়া সৌদি আরব গেছিলাম। ১০০০ রিয়াল বেতন দেওয়ার কথা আছিল। বাসা বাড়ির কাম। প্রথম বাড়িতে মালিকের বউ অনেক মারতো। তাদের ভাষা বুঝতাম না। কাজের দেরি হইলেই লাঠি দিয়া মারতো। এরপর আমারে সেখান থেকে নিয়া আরেক জায়গায় দিছে। সেখানেও ঘরের কাজ। ছোট ফ্যামিলি বইলা আমারে পাঠায়ছিল কিন্তু গিয়া দেখি অনেক মানুষ পরিবারে। পরে সেখান থেকে পালায় যাই দূতাবাসে। এরপর আমারে দেশে পাঠায় দিছে। আমার পাসপোর্ট পর্যন্ত দেয় নাই, কোন ট্যাকাও দেয় নাই। আমি খালি হাতে ফিরছি।

সৌদিতে বর্তমানে কতজন বাংলাদেশি নারী শ্রমিক আছেন জানা যায়নি। ফেরত আসা নারীরা জানান, একই ফ্লাইটে তারা দেশে ফিরেছেন অন্তত ৮০  জন। এছাড়া ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে রয়েছেন ৪০-৫০ জন। আর দূতাবাসে অপেক্ষমাণ আছে আরও কয়েক শ।

তবে মধ্যপ্রাচ্যে নারীরা যে একেবারেই নিরাপদ নয় তা স্বীকার করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ডঃ নমিতা  হালদার বলেন, আমরা যে নির্যাতনের অভিযোগগুলো পাই সেগুলোর ভিত্তিতে সৌদি সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা আমাদের জানিয়েছে ৪৫ শতাংশ নারী তিন মাসের ভেতরে চুক্তি ভেঙে দেশে ফেরত আসে। যারা ফিরছে তাদের পক্ষ থেকে করা শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ সবসময় সত্য নয়, আমি নিজে সেটা জানি।

সাহস২৪.কম/তানভীর/আল মনসুর 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত