ভয়াবহ হুমকির মুখে হালদা

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০১৮, ১১:৩০

সাহস ডেস্ক

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, যন্ত্রচালিত নৌযান চলাচল, নদীর বাঁক কাটা, কল-কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা, রাবার ড্যাম নির্মাণ, সংযোগকারী খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণসহ নানা মানবসৃষ্ট কারণে বিশ্বে কার্পজাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক মত্স্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

জোয়ার-ভাটার এই নদীতে মিষ্টি পানির মাছের ডিম ছাড়ার ঘটনা পৃথিবীর এক বিস্ময়। এই দুর্লভ সম্পদ আমরা হেলায় হারাতে বসেছি, সোনার ডিম  পাড়া রাজহাঁসের পেট চিরে একবারে সব কটি ডিম বের করে নেওয়ার খাসলত আমাদের সব রাজনীতি-অর্থনীতি, এমনকি সামাজিক আচরণের মূল  স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। আমাদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর হঠকারিতায় হালদা এখন ক্লান্ত অবসন্ন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হালদা নদী বিশেষজ্ঞ মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য পানিতে যে পরিমাণ  অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি, দূষণের কারণে হালদার পানিতে এখন সেই পরিমাণ অক্সিজেন নেই। উল্টো পানিতে প্রচুর  পরিমাণে অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে মাছগুলো মরে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, বর্তমানে হালদা নদীর পানিতে প্রতি এক লিটারে অক্সিজেনের পরিমাণ  দুই মিলিগ্রামেরও নিচে নেমে গেছে। অথচ নদীর পানিতে মাছ বেঁচে থাকার জন্য প্রতি লিটারে কমপক্ষে পাঁচ মিলিগ্রাম অক্সিজেন প্রয়োজন।

তিনি হালদা নদীতে দূষণ ও মাছ মরে যাওয়ার ঘটনাকে এই নদীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে মনে করেন।

তিনি জানান, ভাটির চেয়ে উজানে দূষণের মাত্রা বেশি। তার মতে, এবারের বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরের অক্সিজেন থেকে কুলগাঁও এলাকার আবাসিক  বর্জ্য, ভাটি এলাকার পোলট্রি খামার, ট্যানারিসহ বিভিন্ন শিল্পের বর্জ্য ব্যাপকভাবে হালদায় মিশেছে।

তারা মনে করেন, হালদাকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অন্যথায়, মানবসৃষ্ট এসব দূষণ নদীটিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে।

বিগত ৩০ বছর ধরে হালদা নদী নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী। তিনি বলেন,  মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে হালদা দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। এর পেছনে নদীসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খালে স্লুইচগেইট নির্মাণ এবং নদীতে পতিত গৃহস্থলী ও  শিল্পবর্জ্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

তিনি বলেন, নদীর ১১টি স্থানে বাঁক সমান করে ফেলায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন কমে গেছে। বাঁক না থাকায় প্রাকৃতিকভাবে কোনও কুম (নদীর  তলদেশে গভীর খাদ, যেখানে আগে মা মাছেরা ডিম ছাড়তো) তৈরি হচ্ছে না। উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় এখন মা মাছেরা নমুনা ডিম ছাড়ার পর, আর কোনও ডিম ছাড়ছে না। ফলে দিন দিন নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার হার কমছে। এর বাইরে কিছু কিছু জায়গায় জেগে ওঠা চর নদীর স্বাভাবিক  প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। হালদাকে বাঁচাতে হলে দূষণ ও বালি উত্তোলন বন্ধ এবং হালদার মুখে নতুন জেগে উঠা চর অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে  হবে।

সাহস২৪.কম/রনি/আল মনসুর 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত