ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০১৮, ১৩:১৬

সাহস ডেস্ক

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় রিমান্ডে থাকা বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলম নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে তার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের জন্য ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান।

মশিউর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শহিদুল আলম তার উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন। যে বক্তব্য তিনি প্রচার করেছেন, সেটা তার ভুল ছিল। বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রয়েছেন তিনি।

এদিকে রিমান্ডে থাকা শহিদুল আলমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে কি-না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ জন্য তাকে পরীক্ষা করে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৩ আগস্টের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

শহিদুল আলমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি ১৩ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়।

রাজধানীর রমনা থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলায় গত ৭ আগস্ট শহিদুল আলমকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এ আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠান আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গতকাল ওই আবেদনের ওপর আংশিক শুনানি নিয়ে তা ১৩ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবির আদেশ দেওয়া হয়।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ গতকালের নির্দেশটি দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

শুনানিতে সারা হোসেন আদালতকে বলেন, শহিদুল আলমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেওয়া প্রতিবেদনে চারজন ডাক্তারের নাম আছে। তাদের মধ্যে কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। অথচ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ২(৬) ধারায় 'নির্যাতন' বলতে কষ্ট হয় এমন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকে বোঝায়। তাই তার মানসিক অবস্থাও পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এই রিট চলমানযোগ্য নয়। কেননা, তাকে সঠিকভাবেই গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি একটি মোবাইল থেকে ডিবি কার্যালয়ে শহিদুল আলমের স্বাভাবিকভাবে হাঁটার ভিডিও আদালতে উপস্থাপন করেন।

এরপর সারা হোসেন আদালতে অভিযোগ করে বলেন, শহিদুল আলমের মুখে ঘুষি মারা হয়েছে। তার নাকের চারপাশের অবস্থা পরীক্ষা করে শারীরিক অবস্থা নির্ধারণ প্রয়োজন। এ ছাড়া মানসিক পরীক্ষাও জরুরি। পরে আদালত রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন। এ ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে রমনা থানায় ৬ আগস্ট করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ডিবি (উত্তর) পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এরপর শহিদুল আলমকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন বিচারিক আদালত। পরে ওই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও শহিদুল আলমের সুচিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শহিদুল আলম জিজ্ঞাসাবাদে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের কথা স্বীকার করে নানা তথ্য দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন চান তিনি। গোয়েন্দারা বলছেন, কার পরামর্শে, কী উদ্দেশ্যে তিনি ফেসবুক লাইভে এ ধরনের বক্তব্য দেন- তা যাচাই করা হচ্ছে।

গোয়েন্দারা বলছেন, শহিদুল আলম আলজাজিরাকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তা সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী চীনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির চক্রান্তের অংশ হিসেবে তিব্বতের বিতর্কিত ব্যাপার নিয়ে ২০০৯-এর নভেম্বরে ঢাকার ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন শহিদুল আলম। চীনা দূতাবাসের প্রবল আপত্তির কারণে ওই চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয় পুলিশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ করার ঘটনায় অভিযুক্ত ডেভিড বার্গম্যানের ঘনিষ্ঠজন তিনি। এর আগে ভারতীয় সীমান্ত অবৈধভাবে অতিক্রমের সময় তিনি বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছিলেন।

গোয়েন্দারা জানান, মাহমুদুর রহমান ও ফরহাদ মজহারের সঙ্গে একত্র হয়ে শহিদুল আলম দীর্ঘদিন ধরে দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। গুজব প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় সংস্থা অধিকারেরও তিনি অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। ফটোসাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে রয়েছে তার ভিন্ন পরিচয়। গোয়েন্দারা শহিদুল আলমের প্রতিষ্ঠান দৃক এবং পাঠশালার আয়-ব্যয়ের বিষয়ও খতিয়ে দেখছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত