মির্জাপুর গণহত্যা দিবস আজ

প্রকাশ : ০৭ মে ২০১৬, ১১:৪৮

সাহস ডেস্ক
রণদাপ্রসাদ সাহা

দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহার (আর পি সাহা) অন্তর্ধান ও মির্জাপুর গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আজকের এই দিনে মির্জাপুরের সাধারণ মানুষের ওপর আকস্মিক আক্রমণ করে ব্যাপক গণহত্যা চালায় এবং গ্রামবাসীর বাড়িঘর লুটপাট করে। এদিন রাতে আর পি সাহাকে নারায়ণগঞ্জ কুমুদিনী কমপ্লেক্স থেকে তার একমাত্র ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

১৯৭১ সালের ৭ মে জুমার নামাজের পর স্থানীয় দালাল মওলানা ওয়াদুদের নির্দেশে ও তার দুই ছেলে মান্নান এবং মাহবুবের নের্তৃত্বে কিছু ধর্মান্ধ ব্যক্তি মির্জাপুর বাজারে ব্যাপক লুটপাট চালায়। একই সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মির্জাপুরের সাহাপাড়ায় হামলা চালিয়ে নিরপরাধ গ্রামবাসীদের নির্মমভাবে হত্যা করে পাশের বংশাই নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠার পর কোনো এক দুর্গাপূজার সময় বংশাই নদীতে এক নৌকাডুবিতে হোমসের বেশ ক’জন ছাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়। এর মধ্যে বেশ ক’জন মুসলমান ছাত্রীও ছিল। ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রীদের আর পি সাহা নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। ওইসব ছাত্রীর মুত্যুর পর অভিভাবকদের সম্মতিতে কুমুদিনী কমপ্লেক্সেই তাদের দাফন করা হয়। এ ঘটনাকে মওলানা ওয়াদুদ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করেন। তিনি হিন্দুর জায়গায় মুসলমানদের দাফনের বিরোধিতা করে কুমুদিনী কমপ্লেক্সের যে জায়গায় কবরস্থান করা হয়েছে সে জায়গা মুসলমানদের কাছে হস্তান্তরের দাবি তোলেন। আর এ নিয়ে মওলানা ওয়াদুদ যেকোনোভাবেই হোক আর পি সাহার বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে বিরোধিতা শুরু করে। আর এসব বিষয়ে তৎকালীন ইসলামাবাদ সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দেনদরবার করেও কিছু করতে পারেননি ওয়াদুদ। মওলানা ওয়াদুদের অভিযোগ পর্যালোচনা করতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খানসহ অনেকেই মির্জাপুর সফরে আসেন এবং তাদের কাছে মওলানা ওয়াদুদের অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয়।

মওলানা ওয়াদুদ কোনোভাবেই কিছু করতে পারছিলেন না। অবশেষে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ আসে ১৯৭১ সালে। ২৫ মার্চের কালরাতের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বাধার মুখে তারা টাঙ্গাইল পৌঁছায়। এরপরই মওলানা ওয়াদুদ মির্জাপুরে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। তার দুই ছেলে মান্নান ও মাহবুবের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি শান্তি রক্ষার নামে স্থানীয় হিন্দুদের উপর অত্যাচার শুরু করে। অন্যদিকে মওলানা ওয়াদুদ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে আর পি সাহাকে দমন করার কাজে মনোনিবেশ করেন। দালাল ওয়াদুদের প্ররোচনায় এপ্রিলের শেষ দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নারায়ণগঞ্জ থেকে আর পি সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে অনেক চেষ্টার পর সে দফায় তিনি ছাড়া পান।

একাত্তরের নরখাদক জেনারেল টিক্কা খান ৮ মে মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতাল পরিদর্শন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। টিক্কা খানের মির্জাপুর সফর নিয়ে আর পি সাহা ব্যস্ত ছিলেন। ওয়াদুদ ও তার দোসররা জানত টিক্কা খান একবার কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আসতে পারলে আর পি সাহাকে আর শায়েস্তা করা যাবে না। আর এ কারণে ৭ মে দিনের বেলায় মির্জাপুরে লুটতরাজ চালায় আর রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে একমাত্র ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ আর পি সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তারা আর ফিরে আসেননি।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা স্বামী ও সন্তানকে ধরে নেওয়ার পর থেকেই শোকে শয্যাশায়ী হন দানবীর রণদাপ্রসাদের স্ত্রী কিরণবালা দেবী। শেষ জীবনে তিনি নির্বাক হয়ে যান। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকার পর ১৯৮৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পরলোকগমন করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত