‘দেশবিরোধী জঙ্গির লাশ গ্রহণ করতে পারি না’

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০১৬, ১৯:০৯

বগুড়ার শেরপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার রাজশাহী’র মাস্টারমাইন্ড আবু ইব্রাহীম ওরফে তারেক ওরফে রিপন ওরফে তানের (২৫) লাশ নেবেন না তার স্বজনরা। 

রিপন ওরফে তানের বড় বোন সামিনা ফেরদৌস বলেন, ‘বোন হিসেবে ভাইয়ের জন্য মন কাঁদছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কোনো দেশবিরোধী জঙ্গির লাশ গ্রহণ করতে পারি না। 

তিনি বলেন, ‘লাশ গ্রহণ করলে সমাজের মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না। আমরা রাষ্ট্রের কাছে ছোট হয়ে যাবো। আমরা আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ লাশ নেওয়ার পক্ষে না।’ আমাদের সিদ্ধান্তের কথা পুলিশকে জানানো হয়েছে। 

রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়া মহল্লার ৯২ নম্বর বাড়িটি রিপনের দুলাভাই হাফিজুর রহমানের। এ বাড়িতে গিয়ে কথা হয় রিপনের বোন সামিনা ফেরদৌস তিন্নার সঙ্গে।

তিনি জানান, রিপনের একমাত্র অভিভাবক বলতে গেলে এখন তিনিই। তবে তিনি তার লাশ গ্রহণ করবেন না।

তিনি আরও জানান, সোমবার রিপন বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর ওই দিনই বিকেলে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকেসহ তার স্বামী হাফিজুর রহমান, চাচা আবদুস সালাম ও চাচাতো ভাই ইউসুফ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তখনই তারা পুলিশকে রিপনের লাশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। পরে রাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

জঙ্গি রিপন থাকতেন রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকার ১৬৯ নম্বর বাড়িটিতে। রিপনের বাবা গোলাম সবুর ওরফে বাবলা মারা যাওয়ার পর তার দাদি তাকে তিনতলা এ বাড়িটি বানিয়ে দেন। রিপন থাকতেন নিচতলায়। দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন তার চাচা আবদুস সালাম। আর তিনতলা ভাড়া দিয়েছেন রিপন। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িটিতে গেলে নিচতলা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

দোতলায় উঠে কথা হয় রিপনের চাচী বেবি বেগম ও চাচাত বোন তমা খাতুনের সঙ্গে। তারা জানান, জঙ্গি রিপনের লাশ তারা নিতে আগ্রহী নন। রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গিকে নিজেদের আত্মীয় বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা পান তারা।

বেবি বেগম জানান, ছোটবেলায় রিপনের বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা ঝর্ণা বেগম দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে গেছেন। তিনি এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হোস্টেলের আয়া হিসেবে চাকরি করেন। তিনি ছেলের লাশ নিতে চাইবেন না। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন যারা আছেন, তারাও কেউ লাশ নিতে আগ্রহী নন।

সোমবার ভোররাতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জেএমবির সামরিক কমান্ডার বদর মামা ওরফে খালেদ মামা এবং আনসার রাজশাহীর এই মাস্টারমাইন্ড আবু ইব্রাহিম ওরফে তারেক ওরফে রিপন নিহত হন। খালেদ মামার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে।

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বগুড়ার শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরফান আলী জানান, তাদের লাশ এখন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা আছে। তাদের স্বজনরা লাশ নেবেন কী না তা এখনও রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। তারা লাশ নিতে না চাইলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন অথবা আঞ্জুমানে মফিদুলের মাধ্যমে জঙ্গিদের লাশ দাফন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত